আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ মাসে ১২ খুন : ৪টি হত্যা মামলা সিআইডিতে

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: গত বছর জুন থেকে এ বছর জুন মাস অবধি সময়ে সংঘটিত আলমডাঙ্গা থানায় ১২ হত্যা মামলার মধ্যে ৪টি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যান্য হত্যা মামলাগুলো মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও বেগুয়ারখাল গ্রামের আজিজুল হককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ১ বছর অতিক্রম হলেও আজোবধি ১ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি।

জানা গেছে, গত ১ বছরে আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রতি মাসে গড়ে ১টি করে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।  ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে এ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সাল অবধি মোট ১২ মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

গত বছর ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আলমডাঙ্গার কাবিলনগর গ্রামের সলোক নামের এক কিশোরকে বাড়ি থেকে মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সলোকের পিতা শামসুল ইসলাম বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জন। এ ৭ জনই এখন জামিনে মুক্ত। এদের মধ্যে একজন ছিলেন তিওরবিলার নজরুল। তিনি সম্প্রতি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ মামলার প্রধান নটরাজ আসামি তিওরবিলার গ্যাংগ্রুপ প্রধান ফারুক এখন পৃথক মামলায় জেলহাজতে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির হাতে।

গত বছর ২৫ মে উপজেলার কামালপুরের শাকিলের স্ত্রী চাঁদনীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের আড়াই ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হলেও পরবর্তিতে নিহত চাঁদনীর মা বাদি হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি সংখ্যা ৪। তবে আজোবধি কোন আসামি গ্রেফতার করা হয়নি। এ মামলাটিও সিআইডির হাতে। মামলাটির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি।

গত বছর ২০ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার বানিনাথপুরের ইউপি মেম্বার নূর ইসলামের ৩ বছরের শিশু সন্তান এনামুলকে পার্শ্ববর্তী বাড়ির পানবরোজে নিয়ে বলাকা ব্লেড দিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার ৭ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেন। এ মামলায় সকল আসামিকেই গ্রামবাসি আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্যের আজোবধি কোনো কুল কিনারা হয়নি। আসামি ৭ জনই এখন জামিনে আছে। এখনও ফাইনাল চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়নি।

গত বছর ২৫ আগস্ট ঈদের দিন রাতে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার হাফিজুর রহমান ডোবার ও একই গ্রামের রনি নামের ২ কিশোরকে গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাঠের ভেতর গলায় পাটের আঁশের ফাঁস লাগিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ দুটি মামলায় অভিন্ন ৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। হত্যার আগে বাড়িতে গিয়ে হুমকিদাতা প্রধান আসামিসহ এ মামলার মোট ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন ওই ২ হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।

গত বছর ২ আগস্ট রাতে বাড়িতে গিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় উপজেলার বেগুয়ারখাল গ্রামের আজিজুল হককে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে ৫ জন ও অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করা হয়। ১ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও আজোবধি একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ মামলার ৩ ও ৪ নং আসামি আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন। এছাড়া এ বছর  ১৩ জানুয়ারি উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের বাদলের স্ত্রী মিতাকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ঘরের আড়াই ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় মিতার পিতা জিলাল বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলা সি আই ডির হাতে।

এ বছর গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলার নওদা পাঁচলিয়ার মেহগনি বাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মৃত নবজাতক উদ্ধার করা হয়। এ মামলাটি সি আইডির হাতে। ২৫ মে গৌরিহ্রদের রাজু বন্ধুর সহযোগিতায় স্ত্রীকে নগরবোয়ালিয়ার ভাড়াবাড়িতে হত্যা করে লাশ হারদী হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আরজিনার পিতা আব্দুর রাজ্জাক আলমডাঙ্গা থানায় ২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ১ জন আসামিকে আটক করেছে।

এ বছর ৬ জুন দিনদুপুরে তিওরবিলা গ্রামের ক্লিনিক ব্যবসায়ী নজরুলকে মাঠের ভেতর তাড়িয়ে ধরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় বাদী হয়ে চাচাতো ভাই আবু তালেব অজ্ঞাত ৬ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন।

১২ জুন উপজেলার জহুরুলনগর গ্রামের খয়বার আলীকে তার সহোদরেরা পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে হাসপাতালে নেয়ার সময় তার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রশিদা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২ আগস্ট গুপিনাথপুরের ঘরজামাই পাখিভ্যানচালক রশিদুলকে সরিষাডাঙ্গা মাঠে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ জিকে ক্যানেলের পাড়ে পুতে রাখে সোনাতনপুরের  রুহুল ও বলিয়ারপুরের শাহাবুল। এ হত্যা মামলার ২ জন আসামিই আটক। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় ওই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।