আগেভাগেই এবার ধেয়ে আসছে উত্তরা শীতল বাতাস : বেরিয়ে পড়েছে লেপ কম্বল

শীতের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার পারদ সবার নিচে

 

আলম আশরাফ/কামরুজ্জামান বেল্টু: তরতর করে নামছে তাপমাপা যন্ত্রের পারদ। শুষ্কবাতাসে শরীরের চমড়ায় ধরছে টান। লেপ কম্বল বের করতে করতে অপনমনেই গৃহীনি বলছেন, এবার যে এতো তাড়াতাড়ি শীত আসবে বোঝাই যায়নি। আর চুয়াডাঙ্গায়? গরমের সময় অসহনায় গরম, শীতের সময় তীব্র শীত।

এবারের শীতেও চুয়াডাঙ্গার চিত্র যে অভিন্নই থাকবে তার আলামত ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে। আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা এরকমই মন্তব্য করে বললেন, শীতের শুরুতে এবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ডে এগিয়ে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা। উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরকে হার মানিয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৮ দশমিক ৪ আর দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সীতাকুণ্ডে ৩১ দশমিক ৬। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গার কাছাকাছি নেমেছে রাজশাহী, রংপুর দিনাজপুরে। সৈয়দপুরে? গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীত মানেই বাড়তি পোশাক, বাড়তি আয়োজন। এখনও গ্রামবাংলায় গারশি আসে, তবে তা গোপনে। এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি এরকমই মন্তব্য করে বললেন, এখনকার গারশি আর আগের মতো কুলো পিটিয়ে মশা তাড়িয়ে কাঁঠালগাছে ওম বেধে আসে না। তাই তো বোঝাই যায় না শীত আসতে কতো বাকি আর। গারশি এসেছে ২৯ দিন আগে। আর শীত? গারশীর সাথে সাথেই যেন জেকে বসেছে। সাবাবাকশে, বা পলিথিন দিয়ে অতিযত্মে বাধা লেপ-কম্বলও বেরিয়ে পড়েছে বুঝতে না বুঝতে। আহ্ কী মজা। গৃহস্তঘরে ভাপাপুলি, করমারি পিঠের আয়োজন। এসবও কি একদিন গারশির মতোই গোপন হয়ে যাবে? না, তা হবে কেন? বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তো আর দু দিন পরেই চুযাডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নবান্ন।

শীতের প্রশাধনী এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, এবার শীতের নতুন প্রসাধনী বাজারে আসার আগেই শীত হাজির। তাইতো শীতের প্রসাধনী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের কাটছে ব্যস্ত সময়। আর গরম পোশাক? তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতেও নতুনের এখনও অনুপস্থিত। গত বারেরটা দিয়েই চলছে। তবে দু একদিনের মধ্যেই এবারের নতুন মডেলের সোয়েটার, মাফলার চাদর হাজির হবে বিপণীবিতানগুলোতে। তবে পুরাতন এবং অল্পদামের শীতবস্ত্র নিযে এবারও রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বিক্রিও বেশ জমতে শুরু করেছে। এসব দোকানে শীতের তীব্রতা যতো বাড়ে, ক্রেতার ভিড়ও ততো বেড়ে যায়। বিক্রেতারা এরকমই মন্তব্য করে বললেন, নভেম্বরের প্রথমভাগেই যে এরকম শীত পড়বে বুঝিনি। শীতের আগাম আগমনী খবর পেলে আরো বেশি বেশি করে শীতবস্ত্র নিয়েই দোকান সাজাতাম। ফুটপথের দোকানগুলোতে ধনি ক্রেতার চেয়ে দরিদ্র কেতাদেরই ভিড় বাড়ে। এবারও তাই।

চুয়াডাঙ্গায় যেহেতু শীতে তীব্রশীত অনুভূত হয়, সেহেতু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে তথা দুর্ভোগ লাঘবে শীতবস্ত্র বিতরণের বিকল্প থাকে না। ফলে আগেভাগেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগতভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া দরকার। অবশ্য আবহাওয়াবিদেরা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি শীতের তীব্রতা এবার কতোটা বাড়বে, তাপমাপা যন্ত্রের পরদ কতোটা নিচে নামবে। এবারও কি ৩ দশমিক ২ ডিগ্রিতে নামবে? এর আগাম বার্তা তথা পূর্বাভাস পেতে এখনও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।