আগামীকাল একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার একুশে পদকপ্রাপ্ত একমাত্র ব্যক্তি মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র আগামীকাল বুধবার ২৫তম স্মরণোৎসবের উদ্ধোধন করা হবে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার নিজ বাড়ি জাহাপুরে দু দিনব্যাপি স্মরণোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামীকাল বুধবার বেলা ১০টায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী ও সন্ধ্যা সাতটায় আলোচনাসভা ও সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে স্মরণোৎসবের দিবসটি পালন করা হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা ১০টায় মরমী বাউল গান ও বিকেল ৪টায় পূর্ণ সেবা নিয়ে সাধুদের বিদায় অনুষ্ঠান।

আলমডাঙ্গার জাহাপুরে মরমী কবি খোদা বকশ শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঘোলদাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। যাত্রাদলে যোগ দেন। তার ছিলো অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠ। যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় বিবেক সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যাত্রা দলে তার সঙ্গীত জীবন অতিবাহিত হয়। ১৭ বছর বয়সে খোদাবকশ ভাবসঙ্গীত শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হরিণাকুণ্ডুর শুকচাঁদ শাহ’র শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি যান অমূল্য শাহ’র আখড়ায়। সেখানে অতি অল্প সময়ে তিনি ভাবসঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি ফকিরি পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে লালন সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমী খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমি ফেলো পদ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে নিজের আখাড়ায় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি (১ মাঘ) তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাহেলা খাতুন, পুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। নিজস্ব আখড়া বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমী মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।

খ্যাতিমান মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র একমাত্র উত্তরসুরি আব্দুল লতিফ শাহ কবি হ্নদয়ে অব্যক্ত সাধনার তীর ধরে তার অপ্রকাশিত গান নিয়ে ভক্তদের মাঝে চর্চাবৃত্তি অব্যাহত রেখেছেন। কবিপুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ভারতের মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।

খোদা বকশ সাঁই স্মৃতি সংসদ ও তার অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছরই তার জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করে আসছে। তিনি জীবদ্দশায় ৯৫০টি গান রচনা করেন। তার মাজারটি এখনো অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। জাহাপুরে কবির সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং কবির জন্ম- মৃত্যু দিবস দুটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা গুণীজনেরা।