আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের সংঘর্ষে জাজিরা রণক্ষেত্র

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল বুধবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো শরীয়তপুরের জাজিরা। এতে ওসিসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। ৪ ঘণ্টাব্যাপি সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ২৫/৩০টি দোকান ও একটি ক্লাবঘর ভাংচুরসহ তছনছ করে কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তাদের লক্ষ্য করেও বোমা নিক্ষেপ করে তারা। পরে শরীয়তপুর থেকে দাঙ্গা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

জাজিরা থানার ওসি নাজমুল ইসলাম ও জাজিরা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মুকুল খাঁসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাজিরা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ইমরানকে বুধবার সকালে পুলিশ কলেজে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেফতার করে। ইমরান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোবারক আলী সিকদারের সমর্থক। তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে মোবারক সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বেলা ১১টার দিকে উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এসময় মোবারক গ্রুপের সমর্থকরা টিঅ্যান্ডটি মোড়ে মোজাম্মেল হকের ক্লাবঘরের আসবাবপত্র ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে। এ থেকে সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করে। দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী-সমর্থক দেশীয় অস্ত্র রাম দা, ছেন দা, সুরকি, টেঁটা নিয়ে লড়াইয়ে নামে। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এমপি মোজাম্মেল হকের সমর্থকরা ক্লাবঘরের আশপাশের ২৫/৩০টি দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর করে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে পুলিশকে পিছু হটতে হয়। পরে দাঙ্গা পুলিশ এসে থানা পুলিশের সাথে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৬টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে জাজিরা সদরের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল।

সংঘর্ষে ওসি নাজমুল ইসলাম, এসআই আজহার হোসেন, কনস্টেবল শাহজাহান, সুমন ও আতাউর রহমান এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ফজল ফকির, জাকির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, কেরামত আলী চৌকিদার, আবু ফকিরসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ব্যবসায়ী নুরুল হক ব্যাপারিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।

মোবারক আলী সিকদার বলেন, এমপি মোজাম্মেল টিআর-কাবিখার চাল বরাদ্দ দিয়ে আমার বাড়ির সামনে একটি ক্লাবঘর তৈরি করে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আড্ডাখানা বানিয়ে দিয়েছেন। তারা বুধবার সন্ত্রাসের উদ্দেশে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে জনগণ হামলা প্রতিহত করে। বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি গ্রুপ প্রথমে জাজিরা কলেজে আমার সমর্থক দু ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। পরে তারা জাজিরা টিঅ্যান্ডটি মোড়ে দু দোকানদারকে মারধর করেছে। ওইসব সন্ত্রাসী আমার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। ওসি নাজমুল ইসলাম বলেন, এমপি মোজাম্মেল হক ও মোবারক সিকদার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় হামলাকারীদের বোমা ও ইটপাটকেলের আঘাতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। শরীয়তপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সাত্তার জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়েছে।