অপহৃত এক ছাত্রের লাশ বংশী নদী থেকে উদ্ধার

 

স্টাফ রিপোর্টার: অপহরণের পর সাভারের বংশী নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা দুই ছাত্রের মধ্যে একজনের লাশ রোববার বিকালে ডুবুরিরা উদ্ধার করেছেন। আরেক ছাত্রের লাশ উদ্ধারে আটক অপহরণকারীদের নিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে ডুবুরি দলের অভিযান। শেষ পর্যন্ত তার লাশ পাওয়া যায়নি। তবে তার লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সকাল ১০টায় ডুবুরিরা আবার নদীতে নামবেন।

উদ্ধার হওয়া লাশটি মুনির হোসেনের। তিনি মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। তার বাবা কুয়েত প্রবাসী পরশ আলী। যার লাশ এখনও পাওয়া যায়নি তার নাম মনসুর আলী ওরফে মুন্না। তিনি সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তার পরিবার সাভারের ওয়াপদা রোডে ভাড়া বাসায় থাকে। চাকরি দেয়ার কথা বলে তাদের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নদীতে ডুবিয়ে হত্যার পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। শুক্রবার রাতে অপহরণ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী শনিবার বিকাল থেকে বংশী নদীতে লাশ উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়।

রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বংশী নদীর চামড়া শিল্পনগরীর কাছ থেকে মুনিরের লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় শত শত উৎসুক জনতা লাশটি দেখার জন্য নদীর পারে ভিড় করে। লাশ উদ্ধারের পর মুনিরের ফুফাতো ভাই দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার রাফিম মোল্লা লাশটি শনাক্ত করেন। পরে মুনিরের লাশ সাভার মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মাহমুদ আলম সিদ্দিকী জানান, হেডকোয়ার্টারের ৫ জন ডুবুরি দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধারে সকাল ১০টা থেকে অভিযান শুরু করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছয় সদস্যের আরও একটি স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরি দল অংশ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে স্বেচ্ছাসেবক দলের ডুবুরি মো. রাজিবুল হাসান ১৩ ফুট গভীর থেকে মুনির হোসেনের লাশ উদ্ধার করেন।

সাভার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আবদুলাহ আল সাঈদ মামুন বলেন, আটক অপহরণকারীরা স্বীকার করে, তারা ১০ সেপ্টেম্বর মুনির হোসেনকে এবং ২৫ আগস্ট মনসুর আলীকে হত্যা করে সাভারের বংশী নদীতে ফেলে দেয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুই ছাত্রের লাশের সন্ধানে পুলিশ ডুবুরি দলের সহায়তা নিয়ে অভিযান শুরু করে।

যেভাবে দু ছাত্রকে অপহরণ ও হত্যা: গত ৮ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে কলেজছাত্র মুনিরকে অপহরণ করে তার চাচা ও অপহরণকারী দলের সদস্য বাদশা মিয়া। পরে তার মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকা পেলেও চাহিদামতো টাকা না পাওয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর তার হাত-পা বেঁধে সাভারের বংশী নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হয়।

মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চাকরি দেয়ার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুনিরকে মানিকগঞ্জ থেকে সাভারে নিয়ে আসে অপহরণকারীরা। মায়ের কাছে টাকা চেয়ে মুনিরের করুণ আর্তি মুঠোফোনে রেকর্ড করে তারা। এরপর মোবাইলে ওই রেকর্ড শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুনিরের মা মালেকা বেগম বলেন, তার ছেলেকে কৌশলে অপহরণ করে হত্যার পর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারীরা। এ ব্যাপারে শুক্রবার তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী আটক বাদশা মিয়া পুলিশকে জানায়, গত ২৫ আগস্ট রাত ৮টার দিকে অপর ছাত্র মনসুর আলীকেও চাকরির কথা বলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে তারা। পরে তাকে সাভার নামাবাজার এলাকার পাশে বংশী নদীর ধারে নিয়ে একটি ট্রলারে তোলে। এরপর তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গিয়ে কয়েক সঙ্গীকে নিয়ে বাদশা মিয়া তার হাত-পা বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেয়। হত্যার পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া শুরু করে তারা। এভাবে বিকাশে কিছু টাকাও পায়। পুলিশ হেফাজতে থাকা বাদশা মিয়া আরও জানায়, অপহরণের পর অপহৃতদের আর্তচিৎকার রেকর্ড করা হতো। এরপর তাদের হত্যা করে স্বজনদের ওই রেকর্ড শুনিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হতো।

পুলিশ জানায়, মুনির হোসেন এবং মুন্না অপহরণের ঘটনায় একই বিকাশ নম্বর থেকে টাকা নেয়া হয়। পরে তাদের পরিবার পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অপহরণ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। মনসুরের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার থেকে সাভার পুলিশ অপহরণ চক্র গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে।

আটক অপহরণ চক্রের সদস্যরা হলো: অপহরণকারী চক্রের দলনেতা আক্তার হোসেন ওরফে জামাল, সে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার কালিয়াচর গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে; অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী বাদশা মিয়া, সে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে; একই এলাকার পরাণ আলীর ছেলে শুকুর আলী, ট্রলারচালক লাল মিয়া, সে একই জেলার সিংগাইর উপজেলার মৃত আনছার অলীর ছেলে; মো. মনোয়ার হোসেন, সে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার শংকর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে এবং আজগর চৌধুরী, সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার কুসলা গ্রামের শহীদুল হক চৌধুরীর ছেলে।