৯০০ সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৯০০ উইনেবল প্রার্থীর তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা, বাছাই করা দলীয় কর্মীদের একটি জরিপ দল, সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের রিপোর্ট, পেশাদার দুটি জরিপ সংস্থা ও আমলাদের একটি প্রতিনিধি দলের জরিপ প্রতিবেদনে উঠে আসা চিত্র পর্যালোচনা করে এ তালিকা করেছে আওযামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। এর আগে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাড়ে ৩ হাজার মনোনয়ন প্রত্যার্শীর একটি তালিকা ছিলো। সেখান থেকে কমিয়ে প্রতি আসনে তিনজন করে একটি তালিকা করা হয়েছে। ঈদের পর অনেক আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আর তখনই দলের হাইকমান্ড তাদের সবুজ সঙ্কেত দিয়ে মাঠে নামাবেন। দলীয় সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তিন মাস পরপর বিভিন্ন জরিপ অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে তিনি। কমপক্ষে ২শ আসনে জয় নিশ্চিত করার টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে তিনি কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে নারাজ। নির্বাচনে জিতে আসার ঝুঁকিতে আছেন এমন কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এবার ছিটকে পড়তে পারেন। আবার আসন নিশ্চিত করতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে বিএনপির বেশ কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতা, আমলা, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, শিল্পপতি ও প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যক্তিকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য জানান, বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ২৩৪ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০৪ জন আছেন যারা নিশ্চিন্তে জিতে আসতে পারবেন। বাকিরা প্রায় ১০টি কারণে এলাকার ভোটার ও কর্মীদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন।

জানা গেছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এটা ধরে নিয়েই দলীয় মনোনয়ন ছক কষছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আগামী নির্বাচনে শতভাগ নিশ্চিত জিতে আসার মতো প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি ওইসব এলাকার বর্তমান এমপির জনবিচ্ছিন্নতা ও আগামী নির্বাচনে কেন পরাজিত হতে পারেন তার কারণও জমা পড়ছে তার কাছে। জানা গেছে, এবার নির্বাচনী কৌশলও বদল হচ্ছে, তিনশ’ আসনে সমগুরুত্বের বদলে টার্গেট করা হচ্ছে নিশ্চিত জয়ের ২শ’ আসন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত রূপ পাবে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর। বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তার আগে সম্ভাব্য সব প্রার্থী ও বর্তমান সংসদের এমপিদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার কথা বলা অব্যাহত রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে সাড়ে ৩ হাজার থেকে কমিয়ে সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী ৯০০ প্রার্থীকে মাঠে কাজ করতে বলা হবে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু আসনে আগেভাগেই নিশ্চিত জিতে আসার মতো বেশ ক’জন নতুন মুখকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হতে পারে, যাতে তারা এলাকায় পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান। এসব নতুন মুখের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী নেতা, সাবেক পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তা, আমলা ও রাজনৈতিক নেতা। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির এক ডজন নেতার সঙ্গে বিশেষ মহলের যোগাযোগ চলছে। জাতীয়ভাবে এরা বড় নেতা না হলেও তাদের নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় এবং সহজে এমপি হয়ে আসার মতো সক্ষমতা আছে। বৃহত্তর কুমিল্লায় দেখা যেতে পারে বিএনপি থেকে আসা বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। এছাড়া নৌকা প্রতীকে মুন্সিগঞ্জের একটি আসন থেকে লড়তে পারেন দেশময় আলোচিত একটি পরিবারের সন্তান। বর্তমানে যাদের পরিচিতি বিএনপি ঘরানার লোক হিসেবেই।

উইনেবল প্রার্থীর তালিকায় আছেন শতাধিক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাসহ ক্লিন ইমেজের একঝাঁক তরুণ মুখ। তারা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন। রুটিন করে নিজ নিজ আসনে সময় দিচ্ছেন যে যার মতো। সুখে-দুঃখে এলাকার জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা। তাদের অনেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দুর্বলতা কাজে লাগাতে ব্যস্ত। এতে দলের মধ্যে নবীন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে রীতিমতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে স্থানীয় এমপিদের। ঈদকে সামনে রেখে আরো বেশি সক্রিয়া হয়ে উঠছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী উইনেবল প্রার্থীরা। তারা এখন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগের নেতারা, আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীদের অনেকে মনোনয়ন দৌড়ে এবার বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে শুধু এমপি-মন্ত্রীরাই নন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই এবার ঈদ উদযাপন করবেন গ্রামে। অধিকাংশ ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। ঈদে গরিব-দুখিদের মধ্যে কাপড় বিতরণ, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ক্লাবে অনুদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আবার যারা এলাকায় ঈদ করতে পারছেন না তারা ইতঃপূর্বে নিজ নিজ এলাকা ঘুরে এসেছেন। তবে নাড়ির টানে নয়, এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান এমপিরা ভোটের টানে গ্রামে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন জরিপে অগ্রহণযোগ্যরা মনোনয়ন পাবেন না। যেসব প্রার্থীর জয় পাওয়ার মতো অবস্থান নেই, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে উইনেবল ক্যান্ডিডেটরাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন।