সারদার টাকায় জামায়াতের নাশকতা : মমতা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে ভারতের সারদা গ্রুপ জামায়াতে ইসলামীকে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে এমন দাবি করা হয়েছে ভারতের শীর্ষ একটি বাংলা দৈনিকে। গতকাল শুক্রবার পত্রিকাটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এর সাথে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সংসদ সদস্য আহমেদ হাসান ইমরান জড়িত। সরকারিভাবে এ ঘটনার তদন্ত চেয়ে জামায়াতের রাজশাহীর আমির আতাউর রহমানকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও সাতক্ষীরার সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, গত সপ্তায় যমুনা টেলিভিশনের টকশোতে রাজশাহী জামায়াতের আমির আতাউর রহমান বলেছেন, ভারতের কিছু রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে। এর মাধ্যমে ওই পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত হয় বলে মনে করেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেন, তৃণমূল নেত্রী মমতার বিরোধিতার কারণে ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি এবং সীমান্ত চুক্তি থেমে আছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী শক্তির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভারত এবং বাংলাদেশে ব্যবস্থা নিলে তিস্তা চুক্তি এবং সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হবে। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিরাজমান সঙ্কট কেটে যাবে।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ভারত বাংলাদেশ পরীক্ষিত সম্পর্ক। এদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি শাসিত সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে অস্ত্র এবং টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে যাবে- এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি সংসদে তার প্রতিবাদ উপস্থাপন করবেন জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাতে হবে। মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের অনেক সংসদ সদস্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

তিনি জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরা থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত সীমান্তপথে প্রচুর অস্ত্র এবং গানপাউডার আনার তথ্য তারা নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, তখন আমাদের সন্দেহ হয়, সীমান্তের ওপার থেকে কেউ না কেউ জামায়াতকে মদদ দিচ্ছে। এরপর কানসাটে গানপাউডার দিয়ে হামলা হলো, রাজশাহীর ট্রেন পুড়িয়ে দেয়া হলো। এসব নাশকতার ঘটনা প্রমাণ করে সারদার দুর্নীতির টাকা বাংলাদেশে এসেছে। আর এ দুর্নীতির টাকা পেয়ে বিএনপির মদদে জামায়াত একের পর এক নাশকতা করে যাচ্ছে। আগামীতে জামায়াতের আরও ভয়াবহ হামলা করার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেন, বিএনপি এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করতে চাইলে জামায়াতের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ্যে জানাতে হবে।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের হাতে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরুর পর বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিলো মৌলবাদীরা। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে হেফাজতে ইসলাম নামে বকলমে নাম সর্বস্ব আরও একটি মৌলবাদী সংগঠন গজিয়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিলো।

গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিলো। যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার। ঢাকার অভিযোগের সত্যতা নয়াদিল্লী পেয়েছে, যার ভিত্তি ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের কয়েকটি চালানও ভারত থেকে জামায়াতের হাতে দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ইমরান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারদার বেশকিছু অ্যাম্বুলেন্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোতে পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেয়া হয়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া এমপি কুণাল ঘোষও ইডিকে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে টাকার বান্ডিল চালান যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এছাড়া হাওয়ালা ও হুন্ডির মাধ্যমেও গেছে সারদার টাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগ্নিও করেছে সারদা। সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে খরচ হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম মহরম শুরু হয়। ২০১১ সালের ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াতকর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। সে সময়ে তৃণমূলকে অর্থেরও যোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তীকালে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

এ সব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন সিমি নেতা, বর্তমান তৃণমূল এমপি ইমরানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, সিমিকে নিষিদ্ধ করার সময়ে মমতা কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি সবই জানতেন। তারপরও কেন তিনি ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠালেন?
তার দাবি, জামায়াতের সাথে বোঝাপড়া করেই তৃণমূল নেত্রী এ প্রার্থী বাছাই করেছেন। মমতার এ কাজকে দেশদ্রোহ বলে মন্তব্য করে ওই বিজেপি নেতার অভিযোগ, একজন মুখ্যমন্ত্রীর এমন কাজের জন্য রাজ্যে জঙ্গি ও দুষ্কৃতকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে।