রক্তাক্ত সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযান : সংঘর্ষে নিহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতায় রক্তাক্ত সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করেছে। গতপরশু রোববার এ অভিযান চলাকালে যৌথ বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এর প্রতিবাদে জামায়াত আজ মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যার হরতাল ডেকেছে। এদিকে পাবনা সদর উপজেলায় জামায়াত-আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছে।  বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশের এ অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জামায়াত দাবি করেছে, এসময় দলটির অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য এ অভিযানে নেমেছে। রোববার রাতের এ অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। জামায়াত দাবি করেছে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে তাদের একজন কর্মী যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। এছাড়া অভিযানের সময় সাইদুর রহমান নামে জামায়াতের আরেক কর্মী দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অপরদিকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানিয়েছেন, যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে পাঁচজন। তবে তিনি তাদের নাম-পরিচয় কিছুই জানাতে পারেননি। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে জামায়াত আজ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে।

সাতক্ষীরা সদর সার্কেল এএসপি কাজী মনিরুজ্জামান জানান, নিহত দুজনের নাম রিয়াজুল ও আবদুর রউফ বলে জানালেও তারা মারা যাননি, গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলাকালে জেলা জামায়াতের আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল খালেকসহ কয়েক নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই ঘটনা ঘটেছে দেবহাটার কয়েকটি গ্রামেও। জেলাব্যাপি এ অভিযান চলাকালে গ্রেফতার হয়েছে পুলিশের হিসাব মতে ১১ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কলারোয়া উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আশরাফ হোসেন ও একই উপজেলার জামায়াত কর্মী লিয়াকত হোসেন ও ইকবাল হোসেন, দেবহাটার পারুলিয়ার আবদুল গফফার, অদুদ মোল্লা, মো. আহসান উল্লাহ, শাকরার সফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, মো. আনসারউল্লাহ, ভোমরার রবিউল ইসলাম, শাকরা বাজারের নৈশ পাহারাদার আইনুল ইসলাম। গ্রেফতারের পর তাদের সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঠানো হয়েছে বলে বিভিন্ন থানা থেকে জানানো হলেও সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে চায়নি পুলিশ। এমনকি বিকেল নাগাদ তাদের আদালতেও পাঠানো হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের স্বজনরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ খানিকটা রহস্যজনক আচরণ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তাদের নাম-পরিচয়, এমনকি ছবি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে পুলিশ। জেলাব্যাপি পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাবনায় সংঘর্ষে আহত ১৮: পাবনা সদর উপজেলার কোলাদীতে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছে। এরা সবাই গুলিবিদ্ধ বলে জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক দাবি করেছেন। রোববার সন্ধ্যায় পাবনা সদর উপজেলার কোলাদীতে এ সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ ও দলীয় সূত্র জানান, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৮ দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছিল। তারই অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় ভাঁড়ারা ইউনিয়নের খয়েরবাগান এলাকা থেকে ১৮ দলের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে কোলাদী জামতলা নামক স্থানে পৌঁছুলে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন আহত হয়। পাবনা জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, গুলিতে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কেএম মুসা, ভাঁড়ারা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবুল কাশেম, ৮নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক শরীফ মেম্বার, ওহিদ, জিয়া, রতন, আওয়াল, শাহজাহান, মজিবর, রাকিব, কাফি, কালাম, আবতাব, ওমর, রমজান, রতন মোল্লা, ঠাণ্টুসহ ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতরা সবাই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী বলে তিনি দাবি করেন। আহতরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মোশারফ হোসেন হামলার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টা করছে।

এ দিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর (অব.) কেএস মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুর রহীম, সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল। তারা এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন।

সিলেটে শিবিরের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা মোশাহিদ খান আহত হয়েছে। সে মহানগরের ২২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় উপশহর যতরপুর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত মোশাহিদ দাবি করেছে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তার ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যতরপুরে একটি দোকানে বসেছিলেন মোশাহিদ। এ সময় মোটরসাইকেলে ৭-৮ জনের একদল দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। তারা তাকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।