বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সমাচার

বিদেশ যেতে জামিনের আবেদন খালেদা জিয়ার
স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার জামিন আবেদন হাইকোর্টে তোলা হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালতের দফতরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। বুধবার তা হাইকোর্টে দাখিল করা হবে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর দুই মাসের মাথায় আবারও জামিন আবেদন করছেন তার আইনজীবীরা। জামিন আবেদনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অসুস্থতার বিষয় উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন। ওই খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধেও রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার প্রক্রিয়া চলছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ দেন। ওই সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। কিন্তু শুনানির কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এবার এ মামলায় জামিন চাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। তবে আগামী ১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনের আগে এ মামলার শুনানি নিয়ে নানা মত রয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন থাকলেও কারামুক্তিতে বাধা মাত্র দুই মামলা। নানা জটিলতায় মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে এখন অন্তত দুই মামলায় জামিন পেতে হবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের হাতে নেই : ওবায়দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা। সরকার কীভাবে তাকে মুক্তি দেবে? মামলটি রাজনৈতিক হলে তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তির প্রশ্ন ছিলো। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলটির নেতারা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি জনবিস্ফোরণের চেষ্টা করছে। তারা সব কিছুতেই রাজনীতি করতে চায়। তাই দলের নেত্রীর মুক্তির বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছে। আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে তারা সরকারকে হঠানোর জন্য নতুন ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব ঝানু রাজনীতিক হতে পারেন কিন্তু তিনি তো চিকিৎসক নন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন, তা তিনি কিভাবে বুঝবেন? চিকিৎসার বিষয়ে মির্জা ফখরুল তো আর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বার্ধ্যক্যের কারণে। এই বয়সে তার শারীরিক অবস্থা যেমন থাকার কথা ঠিক তেমনই আছে। কিন্তু মির্জা ফখরুল একবার বলেন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ আবার বলেন, মানবিক কারণে মুক্তি দেয়ার কথা। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ফোনে আমাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে যেন কথা বলি। সেটি তিনি অস্বীকার করলে তা প্রমাণ করারও সুযোগ রয়েছে। ফখরুলের সঙ্গে ফোন কলের রেকর্ড আছে। সুতরাং এখানে অসত্য কথা বলার কিছু নেই। তিনি অনুরোধ করেছেন। এখন কী তিনি প্রমাণ করতে চান যে অনুরোধ করেননি। তাহলে কিন্তু প্রমাণ দিয়ে দিতে হবে। আমি এতো নিচে যেতে চাই না। উনি নিজেকে কেন এতো নিচে নিয়ে যাচ্ছেন? খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি বিষয়ে ফোনালাপে কোনো কথা হয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্যারোল নিয়ে মির্জা ফখরুল কোনো কথা বলেননি। প্যারোল দিতে গেলে একজন বন্দিকে বন্দির চেয়েও বড় কথা তিনি কনভিক্টেট প্রিজনার। কনভিক্টের প্রিজনারকেও প্যারোলে মুক্তি দেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু তারা কোনো আবেদনই করেননি। কাজেই সেই নিয়মটি আছে কি-না, যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ আছে কি-না তাকে মুক্তি দেয়ার, সেটা বিবেচনার কোনো অবকাশ নেই।

খালেদার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করবে দুদক
স্টাফ রিপোর্টার: জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের শুনানিতে বিরোধিতা করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। গত মঙ্গলবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিনের আবেদন দাখিল করার পর তা আজই রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে দিতে হয়। এ কারণে জামিন আবেদনের কপি সরবরাহ করা হয়। জামিন আবেদনের কপি পাওয়ার পর দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জামিনের আবেদনের কপি হাতে পেয়েছি। আবেদনটি পড়েছি। সেখানে তেমন নতুন কিছু নেই। শুধুমাত্র নতুন বিষয় হলো, আবেদনে বলা হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বরের পর থেকে দিনদিন খালেদা জিয়ার শারীরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে তথা ইউকে’তে (যুক্তরাজ্য) নিতে চান। তিনি বলেন, আদালতে জামিনের আবেদন আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আইনগতভাবে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এ মামলায় গতবছর ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এই খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে গতবছর ১৪ নভেম্বর আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই আবেদন গতবছর ১২ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এই খারিজের রায় প্রকাশিত হয় গত ১৯ জানুয়ারি। এ অবস্থায় নতুন করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।