বাংলাদেশে ভেদাসহ ৫৪ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে

মহাসিন আলী: বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছের মধ্যে ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়াপ্রায় বিলুপ্ত ৫৪ প্রজাতির দেশি মাছের মধ্যে ভেদা মাছ অন্যতম। অসাবধানভাবে মাছ সংগ্রহ, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে ৩০ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং ভেদা মাছসহ ৫৪ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে।ফসলের জমিতে মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে পানি দূষণ হয়ে মিঠা পানির মাছ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। নির্বিচারে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা,মাছের প্রজননের সময় ডিমওয়ালা মাছ ধরা এবং দেশের আভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণগুলো দেশের মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশের মিঠা পানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ ছিলো। এক সময় গ্রাম-গঞ্জের মানুষ খাল-বিল, ডোবা-নালায় জমে থাকা পানি সেচে ছোট মাছ ধরতো। বিত্তশালীদের কেউ কেউ পুকুর থেকে বড়শি ও জাল দিয়ে মাছ ধরতো। প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কারণে আজ ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পাশাপাশি ৫৪ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত, ১২ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন, ২৮ প্রজাতির মাছ বিপন্ন ও ১৪ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বিলুপ্ত প্রায় মাছের মধ্যে মেনি/ভেদা মাছ অন্যতম। মেনি মাছ স্থানীয়ভাবে ভেদা মাছ বা রায়না মাছ নামে পরিচিত। এ মাছটি একসময় বাংলাদেশের জলাশায়ে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেতো। বর্তমানে এদের অস্তিস্ব হুমকির মুখে।

ভেদা মাছ Nandidae গোত্রের Perciformes বর্গের মিঠা পানির মাছ। ভেদা মাছের ইংরেজি নাম Gangetic leaffish,বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus মাছটির দেহের রং কালচে সবুজ। দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা এবং দেহের দু’পাশে হলুদ সবুজাভ ডোরা দাগ থাকে। পাখনা সবুজাভ থেকে হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে। দেহ টিনয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। এর লেজ গোলাকার এবং মুখ তুলনামূলকভাবে বড়। এরা প্রায় ২০ সে.মি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় এবং নদীতে এরা বাস করে। এরা আবাসস্থলের তলদেশে কর্দমাক্ত পরিবেশে বসবাস করে। বর্ষাকালে প্লাবিত ধানক্ষেত বা পাটক্ষেতে এদেরকে পাওয়া যায়। খাদ্যাভ্যাসে এরা সাধারণত মাংসাসী ধরনের। এরা জলজ পোকা-মাকড়, পোকার লার্ভা ও ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন করে থাকে।

খুলনা সরকারি ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএল কলেজ) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. একেএম নজরুল কবীর বলেন, প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কারণে দেশের মিঠা পানির ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত ও ৫৪ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তের পথে । মানুষ সচেতন হলে- যেমন ফসলি জমিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করা এবং প্রজনন মরসুমে ডিমওয়ালা মাছ না ধরা ও কারেন্ট জাল ব্যবহার না করাসহ দেশের আভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে কল-কারখানার বর্জ্য না ফেলা হলে দেশের মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ির অনেকগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

 

Meherpur Fish Pic-2