ট্রাক্টরের অপব্যবহার ও শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান সড়কে হয়ে উঠেছে দানব পৃথক দুর্ঘটনা : মৃত্যু মিছিলে এক শিশুসহ দুজন

স্টাফ রিপোর্টার: কৃষি সেচের জন্য আমদানি করা শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান আর কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য দেশে আনা পাউয়ারট্রলি-ট্রাক্টর সড়কে দানবরূপ ধারণ করেছে। এসব যানে পৃথক দুর্ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার আরো দুজন মৃত্যুমিছিলে যুক্ত হয়েছে। নিহত দুজনের মধ্যে রয়েছে এক শিশু। ৫ বছর বয়সী শিশু শিহাব ওরফে কালুর প্রাণ কেড়েছে শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান আলমসাধুতে, আর কুড়ুলগাছির রমজান আলীকে চাকায় পিষ্ট করে প্রাণ নিয়েছে ইটভাটায় বালি-মাটিবহন করা ট্রাক্টরে। গতকাল শুক্রবার দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ভূমি অফিসের নিকট বাইসাইকেলআরোহী রমজান আলীকে নেভী ব্রিকসের ট্রাক্টরে চাকায় পিষ্ট করে। তিনি কুড়ুলগাছি হাসপাতালপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লার রিকশাচালক আব্দুস সালাম তুষ্টর কাছে থেকেই বড় হচ্ছিলো নাতি ছেলে শিহাব ওরফে কালু। ৫ বছর বয়সী কালু গত মঙ্গলবার নানাবাড়ি থেকে চানাচুর কেনার জন্য জেলা কারাগারের সামনের দোকানে যাচ্ছিলো। বিকেল ৩টার দিকে সড়ক পার হওয়ার সময় দামুড়হুদা থেকে ছুটে আসা একই গ্রামের সানোয়ার হোসেনের আলমসাধু ধাক্কা দেয়। চাকায় পিষ্ট করে। গুরুতর জখম হয় শিশু কালু। তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার মারা যায় সে। তার মৃতদেহ গতকাল নানাবাড়ি নেয়া হয়। অসহায় মাসহ নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস যখন ভারি হয়ে ওঠে, তখন শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধ যান চালককে রক্ষা করতে বসানো হয় সালিস। সালিসে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় আলমসাধুচালক সানোয়ারকে। এ টাকা দিয়ে কালুর কলমাছানি করা হবে বলে মাতবররা সিদ্ধান্ত নেন।

শিহাব ওরফে কালুর পিতা নাজমুল হক বর্তমানে দামুড়হুদা চিৎলার বাসিন্দা। কালুর মা শেফালী খাতুনকে বাদ দিয়ে নাজমুল নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ফলে কালু ও তার মায়ের ঠাঁই হয় ভিমরুল্লার আব্দুস সালাম তুষ্টর বাড়িতে। সম্প্রতি শেফালীর বিয়ে হয় মাখালডাঙ্গায়। কালু তার নানা বাড়িতেই ছিলো। গত মঙ্গলবার ঘাতক আলমসাধু ধাক্কা দিয়ে জখম করে। শেষ পর্যন্ত সে মৃত্যুর সাথে লড়ে হেরে গেলো। অথচ অবৈধযানের অবৈধ চালকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলো না। ১০ হাজার টাকা কলমাছানির জন্য দিয়েই পার পেয়ে গেলেন তিনি। স্থানীয় অনেকেই এরকমই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এভাবে পার পেলে সড়ক নিরাপদ হকে কীভাবে? জবাব মেলেনি।

দর্শনা অফিস/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় নেভী ব্রিকসের মাটিভর্তি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে কুড়ুলগাছির রমজান নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রমজানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

‌                জানা গেছে, দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের কুড়ুলগাছি হাসপাতালপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে রমজান আলী গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাইসাইকেলযোগে কার্পাসডাঙ্গা বাজারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। রমজান আলী কার্পাসডাঙ্গা ভূমি অফিসের সামনে পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে আসা নেভী ব্রিকসের মাটিভর্তি একটি ট্রাক্টর তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ট্রাক্টরের ধাক্কায় বাইসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে মারাত্মক আহত হন রমজান আলী। স্থানীয়রা রমজান আলীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ ঘণ্টার মাথায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে রমজানের লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে স্বজনরা নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। রমজানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনেরা। রমজানের মৃত্যুর পর থেকেই নেভী ব্রিকসের মালিকপক্ষ সমঝোতার জন্য শুরু করে দৌঁড়ঝাঁপ। অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে সন্ধ্যায় স্থানীয় গোরস্তানে রমজান আলীর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাক্টর এবং চালককে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে সমঝোতা হওয়ায় রমজানের পরিবারের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওয়ালিয়ার রহমান।

কৃষিকাজের জন্য আমদানি করা শ্যালোইঞ্জিন ও পাউয়ারটিলার ট্রাক্টরের অপব্যবহারে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার বলে মন্তব্য সচেতনমহলের।