জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক : পদত্যাগ দাবি নাকচ

স্টাফ রিপোর্টার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ভিসিকে তার অফিস কক্ষে দু দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভিসি চ্যান্সেলরের কাছে সাহায্য চাইলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিসি পদত্যাগের পক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সংগঠন সাধারণ শিক্ষক ফোরাম এবং ভিসির পদত্যাগের বিপক্ষে বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে সাধারণ শিক্ষক ফোরাম। নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ না করা পর্র্যন্ত ভিসি অফিসে অবস্থান এবং ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট (শনিবার-সোমবার) সর্বাত্মক ধর্মঘট। পূর্বঘোষিত পরীক্ষা, পরিবহন ও অন্যান্য জরুরি সেবা ও কাজ ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক ফোরাম জানান, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্র্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ রাখা হবে। তারা দাবি করেন আমাদের শার্ন্তিপূর্ণ কার্যক্রমে বাধা দিয়ে তিনিই আন্দোলনকারী শিক্ষকদের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, এক প্রেসরিলিজে শিক্ষকদের আন্দোলন সম্পর্কে ভিসি আবারও ৭টি মিথ্যাচার করেছেন। এ সংকট নিরসনে সাধারণ শিক্ষক ফোরামও রাষ্ট্রপতিসহ সরকার প্রধানের সহায়তা চায়। তবে সাধারণ শিক্ষক ফোরামের একটাই দাবি মিথ্যাবাদী ভিসির পদত্যাগ।

এদিকে ভিসির পদত্যাগের বিপক্ষে বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলমান সর্বাত্মক ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও দাবি জানান সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শিক্ষক মঞ্চ। এ সময় লিখিত বক্তব্যে আন্দোলন থেকে সরে এসে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আহ্বান জানান ‘শিক্ষক মঞ্চ’। তারা সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, ভিসির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষক ফোরামের আন্দোলনের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। সেই সঙ্গে তারা তাদের অধিকাংশ দাবিকে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।

এদিকে শিক্ষক ফোরামের দাবি ইতিপূর্বে আমরা তাকে উদ্ভুত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তা নিরসনের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তার একের পর এক ব্যর্থতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমরা এ কঠোর অবস্থানে এসেছি। চলমান অচলাবস্থার বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চ্যান্সেলরের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অচলাবস্থা নিরসন করা সম্ভব নয়। আমি আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা নির্ণয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩’র ৫১ ধারানুযায়ী চ্যান্সেলরকে জরুরিভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনেরও অনুরোধ জানিয়েছি। যদি আমার কোনো দোষ প্রমাণিত হয় তবে যা শাস্তি হয় তা আমি মাথা পেতে নেবো। পদত্যাগ করবেন কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়, হতে পারে না। তাই আমি এখনও এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ভাবছি না।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা। এভাবে দিনের পর দিন ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমরা সেশন জটে পড়তে চাই না, ভিসি স্যার এবং আন্দোলনকারী স্যারদের আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন জরুরি অবস্থায় সবাই অপেক্ষায় আছে মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হামিদুর রহমানের দিকে। এখন পর্র্যন্ত রাষ্ট্রপতি বা সরকারের উচ্চ মহল থেকে সংকট সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ কারণে ভিসি, ভিসিপন্থী শিক্ষক, ভিসিবিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির আশু পদক্ষেপের প্রতীক্ষায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, সাধারণ শিক্ষক ফোরামের ধর্মঘট চলাকালে বুধবার বেলা এগারোটায় শিক্ষকদের ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে ভিসি তার অফিসে প্রবেশ করলে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ভিসির কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে তার অফিস কক্ষেই তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাকে সেখানেই আটকিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।