কাস্টমসের পরিত্যক্ত কক্ষে চলছে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম : পুরোনো পুলিশ ফাঁড়ির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস

২৭ বছরে দর্শনা জয়নগরে নির্মা করা হয়নি ইমিগ্রেশন ভবন : কার্যক্রম বিঘ্নিত

 

দর্শনা অফিস: ফি বছর সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব পেলেও অদ্যাবধি ইমিগ্রেশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসের ছোট একটি পরিত্যক্ত কক্ষে ঠাঁসাঠাসি করে চলছে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম। পুরোনো পুলিশ ফাঁড়ির পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পুলিশ সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। প্রায় ২৭ বছর আগে দর্শনা জয়নগরে ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও সে জমিতে আজ পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। কেন কী কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভবন নির্মাণের ব্যাপারে উদাসীন সকলের কাছে এটাই প্রশ্ন। অন্য ভবনে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীসেবা, অন্যদিকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পোয়াতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

Ckake Post (3)

জানা গেছে, ১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেলপথ চালু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এ রুটে দু দেশের মধ্যে পার্সপোর্টধারী যাত্রী চলাচলা ব্যবস্থা শুরু হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পাসপোর্টধারী যাত্রীসাধারণের যাতায়াত সুবিধার জন্য কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো দর্শনা রেলস্টেশনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে। বর্তমানে এ স্টেশনটি দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে রুপান্তরিত হয়েছে। ১৯৮৭ সালেই ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একই সাথে জমি অধিগ্রহণ করে জয়নগরে। ওই বছরের ২৯ মে কাস্টমস ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খুলনা শুল্ক ও আবগারি কালেক্টর একেএম ফজলুল হক। একই সাথে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৭ বছর ধরে নিজস্ব ভবনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ ৪০ শতক জমি অধিগ্রহণ করে এতোদিনেও ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস ভবনের এককোণে পরিত্যক্ত ছোট একটি কক্ষে ঠাঁসাঠাসি করেই সে থেকে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই মধ্যে জয়নগর চেকপোস্টে বিজিবি নিজস্ব অতিথি ভবন নির্মাণ করেছে। সেখানে বিজিবি সদস্যদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

Ckake Post

দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে ১ জন এসআই, ১ জন এএসআইসহ ১৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সকাল ৭ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কর্মরত থাকে। অথচ তাদের নেই কোনো নিজস্ব ভবন। ফলে প্রতিদিন নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে কোনোভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম। নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায় এক রকমের অরক্ষিতভাবেই রাখতে হচ্ছে ইমিগ্রেশনের মূল্যবান মালামাল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। অন্য ভবনে নিজেদের কার্যক্রম চালানোর কারণেই যাত্রীসেবা দিতে ব্যর্থ হতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে। সেইসাথে ইমিগ্রেশনের প্রায় ১৪ জন সদস্যের জন্য নেই থাকার ব্যবস্থা। দর্শনা পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ির শতবর্ষি জরাজির্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পুলিশ সদস্যরা করছে বসবাস। যেকোন সময় ভবনটি ধ্বশে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও রয়েছে আশঙ্কা। গত ২০১২ অর্থ বছরে এ রুটে বাংলাদেশ ভারত যাতায়াতকারী পার্সপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ৬৭ হাজার ২৫৩ জন, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দু দেশে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৪৭ জন। তাছাড়া গড়ে প্রতিদিন এ রুটে প্রায় ২শ জন যাত্রী বৈধভাবে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করছে। প্রতিদিন ভ্রমণকর বাবদ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে প্রায় অর্ধলাখ টাকা। এতে ফি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় তড়িৎ গতিতে ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের দাবি এখন সর্বস্থরের মানুষের।