কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব

স্টাফ রিপোর্টার: কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ সরকার গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে তলব করে। হাইকমিশনার আফরাসিয়াব মেহেদি হাশমি কোরেশি ঢাকায় পররাষ্ট্র দফতরে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অসন্তোষের কথা তাকে জানানো হয়।

এর আগে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে জাতীয় পরিষদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং অনভিপ্রেত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল। কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় গত শুক্রবার। সেদিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানো পাকিস্তানের নীতি নয়। কিন্তু যেভাবে সেখানে এ বিচার চলছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ তাদের নজরে এসেছে। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছিলো। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান এর সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা করে এবং কাদের মোল্লাকে নির্দোষ বলে দাবি করে। সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার নিন্দা করে একটি প্রস্তাবও পাস হয়। পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন’র খবর অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর একজন এমপি শের আকবর খান এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এবং ইমরান খানের দল তেহরিক-ই ইনসাফ প্রস্তাবটি সমর্থন করে। পিপিপি এবং এমকিউএম এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।

এ প্রস্তাবে কাদের মোল্লার পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানানো হয় এবং পুরনো ক্ষত আবারো খুঁচিয়ে না তোলার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান কাদের মোল্লার ফাঁসিকে বিচারের নামে হত্যা (জুডিশিয়াল কিলিং) বলে বর্ণনা করেন।
পাকিস্তান সরকার এবং বিভিন্ন দলের রাজনীতিকদের এসব মন্তব্যে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের প্রস্তাব এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল। ইনু আরো বলেন, যতোই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে নেয়া হবে। যদি বিচারে সাজা হয়, তবে তা কার্যকর করা হবে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের প্রস্তাব ও বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে, পাকিস্তান এখনো শোধরায়নি এবং একাত্তরের নীতি থেকে সরে আসেনি।

এদিকে, মঙ্গলবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এক সভায় আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, সার্বভৌম বাংলাদেশের শক্তিশালী স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এ রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো দেশের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর প্রতিবাদ করা উচিত।
তিনি বলেন, বিশ্বে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে দেয়া উচিত, দীর্ঘ শুনানি শেষে সব বিচারিক প্রক্রিয়া মেনে আপিল বিভাগের মাধ্যমে এ রায় কার্যকর হয়েছে। টোকিও ট্রায়াল এবং ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কনভেনশন অনুযায়ী আইসিটি আইন করা হয়েছে। সুরঞ্জিত বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়কে জুডিশিয়াল কিলিং বলছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তারা একবারো ৩০ লাখ মানুষ হত্যা এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা বলেনি।

কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের নাশকতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান সুরঞ্জিত। তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন গণহত্যার দায়ে কেউ দোষীসাব্যস্ত হলে সাতক্ষীরার সংখ্যালঘুদের দোষ কী- এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।