কাদের মোল্লার ফাঁসি আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত

ফাঁসির প্রায় সকল প্রস্তুতির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদেশে

স্টাফ রিপোর্টার: বিকেল থেকে সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ে, কাদের মোল্লার ফাঁসি রাত ১২টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হচ্ছে। দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পরিবারের নিকটজনদের দেখা করার জন্যই ডাকা হয় কারাফটকে। কাদের মোল্লার সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা। ফাঁসির সকল প্রস্তুতির পর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদেশে স্থগিত হয় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ার কার্যক্রম। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

image_92247 kader

স্থগিতাদেশ প্রশ্নে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাদের মোল্লার আইনজীবীদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ স্থগিতাদেশ দেন। বিচারপতির কাকরাইলস্থ বাসভবনের আদালত কক্ষে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুটি কারণ দেখিয়ে ফাঁসি দেয়ার কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। আবেদনে বলা হয়, আমরা সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি- মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসি দেয়া হবে। জেল কর্তৃপক্ষের এ আদেশ সংবিধান, আপিল বিভাগের রুলস ও জেলকোডের পরিপন্থি।

শুনানিতে কাদের মোল্লার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইতোমধ্যে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিলের জন্য একটি দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। ওই দরখাস্তে রায়ের সার্টিফায়েড কপি চাওয়া হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হবে তা লিগ্যাল নোটিসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সংশোধিত জেলকোডের বিধান অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় জেল কর্তৃপক্ষ পাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য কাদের মোল্লা ১৫ দিন সময় পাবেন; কিন্তু সংবিধানে রিভিউ পিটিশন দাখিলের সুযোগ এবং জেলকোডের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগের সময় না দিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যা সংবিধান আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ আদেশ অবিলম্বে স্থগিতের প্রার্থনা করেন তারা। আইনকানুনকে তোয়াক্কা না করে এভাবে ফাঁসি দেয়া হলে তা হবে একটি হত্যাকাণ্ড। এ পর্যায়ে চেম্বার বিচারপতি বলেন, আপনাদের এ পিটিশনটি যথা নিয়মে উত্থাপিত হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে নোটিস না দিয়েই এটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে নোটিস দেয়ার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সময় দিলে আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে যান। সেখানে না পেয়ে ফাঁসি স্থগিতের আবেদনের একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেলের বাসায় গিয়ে তার কাছে সরবরাহ করেন। এরপর তারা পুনরায় চেম্বার জজের কাকরাইলস্থ বাসায় ফিরে আসেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত শুনানির পর চেম্বার জজ আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে এ আদেশের একটি কপি নিয়ে আইনজীবীরা কারাগারে নিয়ে যান। রাত ১১টার দিকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চেম্বার আদালতের ফাঁসি কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছে দেন। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছি। ওই পিটিশনের সাথে ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিতের জন্য একটি আবেদন দিই। ওই আবেদনের ওপর চেম্বার বিচারপতি আগামীকাল (আজ বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। এ স্থগিতাদেশ থাকায় ফাঁসি কার্যকরের কোনো সুযোগ নেই কারা কর্তৃপক্ষের। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এ আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, চেম্বার বিচারপতির আদালতে যাওয়ার বিষয়টি আসামিপক্ষ আমাকে জ্ঞাত করেনি। চেম্বার বিচারপতি ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন কি-না তাও জানি না। কারণ সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমকে রহমান বলেন, এ ধরনের স্থগিতাদেশ দেয়ার আগে আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করা উচিত ছিলো, তাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতো। আমাদের অন্ধকারে রেখে এ আদেশ নেয়া হয়েছে। স্থগিতাদেশ দিলে ফাঁসি কীভাবে কার্যকর হবে? আমরা তো আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও জেলসুপার ফরমান আলী জানিয়েছিলেন, রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। যদিও সকালে জেলসুপার ফরমান আলী এক সংবাদ ব্রিফিঙে বলেছিলেন, ৮ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যু পরোয়ানা পাই। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য কাদের মোল্লা সাত দিনের সময় পাবেন। কিন্তু সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হবে। এর আগে গতকাল সকালে জেলসুপার ফরমান আলী বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছি। ওই দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। এরপর বিকেলে একজন ডেপুটি জেলার কাদের মোল্লার বাসভবনে যান এবং তার পরিবারের কাছে চিঠিও হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে রাত ৮টার মধ্যে কাদের মোল্লার সাথে সাক্ষাতের জন্য পরিবারের সদস্যদের বলা হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পরেই রাত পৌনে ৮টার দিকে কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ারা জাহানসহ পরিবারের ২৩ সদস্য দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে ছেলে, চার মেয়ে, তাদের জামাতা, কাদের মোল্লার ভগ্নিপতিও ছিলেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে তারা সবাই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল সাংবাদিকদের বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। জেলকোড এখানে মানা হয়নি। উনি এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ কোনো কপি পাননি। ওনার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাদের মোল্লার সাথে সাক্ষাত করেন তার আইনজীবীরা।

সাক্ষাত শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপিল বিভাগের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিলের অনুমতি দিয়েছেন জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি-না, সে বিষয়ে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, জেলকোড অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর ১৫ দিন পর্যন্ত সময় থাকে। ৮ তারিখে মৃত্যু পরোয়ানা ইস্যু হয়েছে, তাই ২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। ২১ বা ২২ তারিখে তার সাথে আবার দেখা করে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে তার মতামত জানা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর আপিলের রায়ে সর্বোচ্চ আদালত তাকে ফাঁসি দেন। গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত রোববার ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।