ইবিতে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ : ভাঙচুর ককটেল বিস্ফোরণ

ইবি প্রতিনিধি: মহান বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের দিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ইকবাল হোছাইন ও আসাদ উদ্দিন নামে একজন কর্মচারীসহ ছাত্রদল-ছাত্রলীগের অন্তত ৮ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, দু রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খানসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনভবনে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জন্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল পরস্পরকে দায়ী করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে প্রশাসনভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনের একাংশসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের স্মারকভাস্কর্য মুক্তবাংলায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জিয়া পরিষদ, ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্তবাংলা থেকে খানিক দূরে অবস্থান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ৯টা ৪০ মিনিটে শিক্ষক সমিতি, জিয়া পরিষদ, ছাত্রদল ও তাদের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দেয়ার জন্য মুক্তবাংলায় যান। এ সময় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পরস্পরকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন উত্তেজনাপূর্ণ স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের দিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে ইটের আঘাতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ইকবাল হোছাইন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল কালাম আজাদ আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে ধাওয়া দিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মুক্তবাংলা থেকে সরে গিয়ে প্রশাসনভবনের পশ্চিম পাশে আমবাগানে অবস্থান নেন। পরে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগকে পাল্টা ধাওয়া করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান, যুগ্মআহ্বায়ক আবুজর গিফারি গাফফার, সজিবুল ইসলাম সজিবসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে আশ্রয় নেন। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রশাসনভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও দু রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

এদিকে প্রশাসনভবন ভাঙচুর শেষে ছাত্রদলকর্মীরা বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রীতি ভলিবল খেলার জন্য প্রস্তুতকৃত মঞ্চ ভাঙচুর করেন। পরে তারা সেখান থেকে সরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় আসাদ উদ্দিন নামে একজন কর্মচারীকে ছুরিকাঘাত করেন ছাত্রদলকর্মীরা। আসাদ উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রশিবির অনুষদ ভবনের সামনে থেকে ছাত্রলীগবিরোধী একটি মিছিল নিয়ে ডায়না চত্বরে পৌঁছুলে ছাত্রদলকর্মীরা তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে খোঁজ করতে থাকেন। এ সময় ক্যাম্পাসের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয় পুলিশ। ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পর শিবির ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে লাঠি নিয়ে মহড়া দেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় প্রশাসনভবনে আশ্রয় নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান বলেন, মুক্তবাংলায় ফুল দেয়া শেষে আমরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। এ সময় ছাত্রদল ক্যাডাররা অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়।

ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলে ছাত্রলীগ উত্তেজনাপূর্ণ স্লোগান দেয় এবং আমাদের দিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ ঘটনায় আমাদের কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।’ ইবি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বনে, ‘ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। পরে মীমাংসা হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’