অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসা করাতে চুয়াডাঙ্গায় এসে দরিদ্র পিতার নাকানি চুবানি : বুক ফাটা কান্না

 

স্টাফ রিপোর্টার: অসুস্থ মেয়ে সীমাকে (২১) বাঁচাতে পারলেন না দরিদ্র পিতা আবু হোসেন। ইনজেকশনের দাম ৮ টাকা নাকি ৪০ টাকা? এ নিয়ে ধন্ধে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ওই ইনজেকশন পুশ করতেই মারা গেলো মেয়ে সীমা। মেয়েকে বাঁচাতে না পেরে পিতা আবু হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কাঁদতে কাঁদতে অসহায় পিতা বলেন, আমার মতো অভাগা এই জগতে আর নেই। দিন আনা দিন খাওয়া। অথচ ওরা ওষুধে ঠকালো। দুটি ইনজেকশনের দাম ১৬ টাকা। অথচ আব্দুল্লাহ ফার্মেসি নিলো ৮০ টাকা। তাতেও কষ্ট হতো না, যদি মেয়েকে বাঁচাতে পারতাম। পারলাম না। হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করেও ঠিকমতো চিকিৎসা-ই হলো না। বলে বলেও অক্সিজেন দিলো না। এক পর্যায়ে অক্সিজেন দিলেও ইনজেকশন দেয়ার সময় সিনিয়র নার্স পেলাম না। ডাক্তার বললো, ইনজেকশন ১০ মিনিট ধরে দিতে হবে। ছাত্রী নার্স দিলো দু মিনিটে। মেয়ে মরে গেলো। আমি এখন আমাকে বুঝ দেবো কী বলে?

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার আবু হোসেনের মেয়ে সীমা খাতুনের বিয়ে হয় যশোর চৌগাছা বারোহাটির নীরবের সাথে। সে দরিদ্র। পরিবহনের হেলপার। সীমা খাতুন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তার পিতার বাড়ি থেকে গতকাল চুয়াডাঙ্গায় আনা হয়। ডা. আব্দুর রশিদকে দেখানো হয়। তিনি ব্যবস্থাপত্র দিলেও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। ডায়বেটিসে আক্রান্ত। হার্টেরও সমস্যা ছিলো। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেলা ২টার দিকে ভর্তি করানো হয়। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে অক্সিজেন দেয়ার জন্য সীমার পিতা-মাতা সেবিকাকে অনুরোধ করেন। তখন তা দেয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক রোগী না দেখার কারণে সীমার পিতা আবারও ডা. আব্দুর রশিদের নিকট যান। তিনি ক্যালসিয়াম গ্লোনেট-১০ লিখে দেন। সীমার পিতা আব্দুল্লাহ ফার্মেসিতে ইনজেকশন কিনতে যান। ফার্মেসি থেকে দু অ্যাম্পুল ক্যালসিয়াম জেসন-৫ দেন। দাম নেয়া হয় ৮০ টাকা। এ ইনজেকশন নিয়ে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্স বিভা লাহেড়ির নিকট দিলে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনে লিখতে হবে। না লিখলে ওই ইনজেকশন দেয়া যাবে না। ধন্ধে পড়েন আবু হোসেন। তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. আব্দুর রশীদের নিকট হাসপাতালের স্লিপ নিয়ে পাঠান। পথিমধ্যে অন্য একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে বিড়ম্বনার কথা বলেন। তখন ওই ওষুধের দোকান মালিক ইনজেকশন দুটি কতো নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮০ টাকা। ওই ফার্মেসি মালিক জানান, ওর দাম তো অতো নয়! দুটির দাম ১৬ টাকা। এ কথা শুনে দরিদ্র আবু হোসেন ছুটে যান আব্দুল্লাহ ফার্মেসিতে। তখন ফার্মেসি বন্ধ। উপায় না পেয়ে তিনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে মেয়ের অবস্থা জানিয়ে চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লিখে দেন ১০ মিনিট ধরে ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করার জন্য। সমস্যা হলে চিকিৎসকের জানাতেও বলেন তিনি। দম ছেড়ে বাঁচেন আবু হোসেন। ওয়ার্ডে গিয়ে কাগজ দেন। দেন ইনজেকশনও। কর্মরত স্টাফ নার্সের বদলে ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করেন শিক্ষানবিস নার্স এ সিদ্দিকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। তখন তড়িঘড়ি করে নাকে দেয়া হয় অক্সিজেন। ডাকা হয় চিকিৎসক। জরুরি বিভাগে কর্মরত ডা. মশিউর দ্রুত রোগীর শয্যাপাশে যান। নেড়ে চেড়ে দেখে বলেন, রোগী মারা গেছে।

মেয়ে মারা গেছে শুনে দরিদ্র পিতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমার মতো মানুষ কি হাসপাতালে চিকিৎসা পায়? পেলো না। যা হবার তাই হয়েছে। ভাগ্যেরই দোষ! রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেয়ের লাশ নিয়ে হাসপাতালেই বসে কাঁদছিলেন আবু হোসেন ও তার স্ত্রী। রাতে আব্দুল্লাহ ফার্মেসি বন্ধ থাকায় ইনজেকশনের মূল্য বেশি নেয়া সম্পর্কে মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ১০ মিনিট ধরে ইনজেকশন দেয়ার কথা ব্যবস্থপত্রে লেখা হলেও কেন দু মিনিটে পুশ করা হলো সে বিষয়েও সেবিকাদের পক্ষে কিছু জানানো হয়নি।