অবরোধ : একদিনের বিরতিতে দূরপাল্লার কোচে ভিড় : যাত্রী সামলাতেও হিমশিম রেল রাজনীতির রোষানলে পিষ্ট আমজনতা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ঝুলে যাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধ। সড়ক যোগাযোগের সুযোগ সপ্তাহে একদিন। আর রেল? চলাচল করলেও পদে পদে যেমন ঝুঁকি, তেমনই ভেঙে পড়েছে সময়সূচি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের পর গতকাল ছিলো একদিন বিরতি। তাতেই যেমন সড়ক পেয়েছিলো যেন প্রাণ, তেমনই রেলভ্রমণকারীরাও চেপে ছিলেন রেলগাড়িতে। উপচেপড়া ভীড় সামলে অসংখ্য যাত্রী ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে ঝুলে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

অবরোধের কারণে সপ্তাহের শুক্রবারটি যোগাযোগের নির্ধারিত দিন হয়ে ওঠাই যেমন ছিলো দূরপাল্লার কোচে ভীড়, তেমনই ছিলো ট্রেনে। রাজধানী ঢাকাতেও অবর্ণনীয় যানজটে পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে যাত্রী সাধারণকে। আজ শনিবার সকাল থেকে আবারও অবরোধ। এবারের অবরোধ ৮৩ ঘণ্টার। ফলে গতকালের দিনটিই কাজে লাগাতে গিয়ে ট্রেনভ্রমণকারীদের ঝুঁকি দেখে চমকে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। সময়সূচি ভেঙে পড়ায় যেমন তাদেরকে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তেমনই নির্ধারিত ট্রেন পেয়ে উঠতে হয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে গতকাল ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠার দৃশ্য ছিলো চমকে দেয়ার মতোই। কোচগুলোতেও ছিলো উপচে পড়া ভীড়।

গতপরশু ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসটি চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায় গতকাল দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। গোয়ালন্দগামী নকশিকাঁথা প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে পৌঁছায়। উর্ধ্বমুখি কপোতাক্ষ ৯টা ৪০ মিনিটের বদলে পৌঁছায় বেলা সোয়া ১২টায়। রূপসা এক্সপ্রেস চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায় ৬ ঘণ্টা বিলম্বে। উর্ধ্বমুখি মহানন্দাও চলেছে প্রায় দু ঘণ্টা দেরিতে। রকেট ২টা ২২ মিনিটে পৌঁছুনোর কথা থাকলেও তা পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। সাগরদাড়ী এক্সপ্রেসটিও প্রায় দু ঘণ্টা বিলম্বে ৮টা ১০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছে উর্ধ্বমুখে যাত্রা করে। আর নিম্নমুখি তথা খুলনাগামী ট্রেনগুলোরও বিলম্ব ছিলো লজ্জার। আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেসটিও চুয়াডাঙ্গা স্টেশন প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বে অতিক্রম করে দর্শনা হয়ে গেদে প্রবেশ করে।

ট্রেনগুলোর বিলম্বে স্টেশনে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কেনো বিলম্ব? এ প্রশ্নের জবাবে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে কর্মরত স্টেশন মাস্টার রেজউল করিম জানান, অবরোধের কারণে নাশকতার আশঙ্কায় ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অবরোধ চলাকালে ঝুঁকির কারণে তেমন যাত্রী থাকছে না। আর অবরোধমুক্ত দিনে উপচেপড়া ভীড় হচ্ছে। ফলে ট্রেনগুলো সকল যাত্রী নিয়ে স্টেশন ত্যাগে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে। এসব কারণেই মূলত অতো বিলম্ব।

তাই বলে রাত সাড়ে ১০টার ট্রেন দিন সাড়ে ১২টায়? এ প্রশ্নের অবশ্য জবাব মেলেনি। তিনি শুধু বলেছেন, দেশের বাস্তবতা তো আর অস্বীকার করা যায় না। স্টেশন মাস্টারের এ কথা শুনে পাশে থাকা অপর এক যাত্রী প্রশ্ন তুলে বললেন, এর ব্যার্থতা কী সরকারের নয়? অপরজন অবশ্য বিরোধীদলকেও দুষলেন। বললেন, রাজনীতির রোশানলে পিষ্ট হচ্ছি আমরা আমজনতা।