অবরোধের তৃতীয় দিনে বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় আহত অর্ধশত : চুয়াডাঙ্গা বিএনপির মিছিল ফের ৮৪ ঘণ্টার অবরোধ : কোর্টচাঁদপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন

স্টাফ রিপোর্টার: ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হতে না হতেই আবারও ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আগামীকাল শনিবার থেকে টানা ৪ দিনের অবরোধ শুরু হবে। তাদের ডাকা অবরোধের তৃতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সরকারি ও বিরোধীদলের কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নাশকতার অভিযোগে ৪০ জনকে আটক করেছে। চুয়াডাঙ্গা বিএনপির দু পক্ষই অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে। আলমডাঙ্গায় জামায়াতে ইসলামী মিছিল করে অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে। ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুনসহ ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হতে না হতে আবারও ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিরোধীদল। প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আগামীকাল শনিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফের টানা ৮৩ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এ নিয়ে পঞ্চম দফা সারাদেশে সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধের কর্মসূচির ডাক দিলো তারা। চতুর্থ দফা টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, লালমনিরহাট হাতীবান্ধা পাটগ্রামে বাউড়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী সভার আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেখানে দলীয় প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন আসার আগে অতর্কিত হামলা চালায় অবরোধকারীরা। এতে অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। সকালে শিবিরকর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ১০ শিবিরকর্মী আহত হয়েছেন। সাতক্ষীরা  কালীগঞ্জের গোবিন্দপুরে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সংঘর্ষে ২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বরিশাল-ভোলা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল শাহিন এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের কালীগঞ্জে টায়ারে আগুন দিয়ে বিএনপি কর্মীরা বিক্ষোভ করেছে।

নীল নকশার নির্বাচনের তফশিল বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে ১৮ দলের দাবিতে টানা ৭২ ঘণ্টা সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ৩য় দিন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরে বসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছুলে পুলিশ মিছিলকারীদেরকে বাধা দেয়। পুলিশি বাধার মুখে নেতাকর্মীরা শহীদ হাসান চত্বরে বসে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম.জেনারেল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক অ্যাড. আ.স.ম. আব্দুর রউফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, সদর পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মালিক মজু, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাড. মঈনুল হোসেন, আইনজীবী ফোরামের অ্যাড. আকরাম হোসেন, অ্যাড. আনছার আলী, অ্যাড. কাজল মাহমুদ, অ্যাড. হুমায়ন, পৌর বিএনপির যুগ্মসম্পাদক রবিউল ইসলাম লিটন, জেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, জেলা যুবদল নেতা আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মোকলেছুজ্জামান মোখলেছ, মুকুল জোয়ার্দ্দার, ফারুক মল্লিক, আরিফুজ্জামান পিন্টু, মামুন রেজা সবুজ, ওলামাদলের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান, জাহিদ মোল্লা, হিন্দু-বৌধ-খ্রিস্টান পরিষদের সভাপতি সুশিল কুমার দাস, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক এমএ তালহা, যুগ্মআহ্বায়ক মঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, সুজন মালিক, জেলা কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহাবুবুল হক খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইসলাম আলী, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, মোমিনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাদত মাস্টার, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান লিটন, বেগমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লিয়াকত হোসেন, পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির ৬ নং ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস ছাত্তার, সাধারণ সম্পাদক শাহানাজ কালু, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার প্রমুখ।

বিএনপির একাংশ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি সকাল ১১টার দিকে জেলা বিএনপি একাংশ একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি কোর্টমোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কোর্ট মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল হালিম হিরু, যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু, দফতর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, জেলা জামায়াত ইসলামীর শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, পৌর বিএনপির সহসভাপতি আওরঙ্গজেব বেল্টু, সদর উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমির আব্দুর রউফ মিয়া, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, পৌর জামায়াত ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, পদ্মবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডল, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান মিলন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর নবী সামদানী, মোমিনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইবাদত হোসেন, পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদূর রায়হান কাজল, নতিপোতা ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, চুয়াডাঙ্গা পৌর ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুনছুর আলী মনো, জেলা তৃণমূল দলের আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক আবু, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান প্রমুখ।

ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি অতিবাহিত হয়েছে আলমডাঙ্গায়। উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল আলমডাঙ্গা শহর প্রদক্ষিণ শেষে হাফিজ মোড়ে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ টিপু। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর আমির মীর আব্দুল জলিল, উপসহকারী সেক্রেটারি নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম, উপজেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক শামছুল আবেদীনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন-জেলা শিবিরের অফিস সম্পাদক মামুন রেজা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, পৌর কমিটির সভাপতি আশরাফুল হক, পৌর জামায়াতের নায়েবে আমির নজরুল ইসলাম, পৌর সেক্রেটারি রবিউল ইসলাম, ডাউকী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আব্দুল মান্নান, কুমারী ইউনিয়নের আমির বিল্লাল হুসাইন, জামজামি ইউনিয়নের আমির সেলিম রেজা, বেলগাছি ইউনিয়নের আমির শওকত আলী, উপজেলা শিবিরের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, পৌর শিবিরের সেক্রেটারি সাকিবুর রহমান, জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ, হারুনার রশীদ, রফিকুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছে, অবরোধকারীরা কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করে ভাঙচুর শেষে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধকারীদের একটি মিছিল বাসস্ট্যান্ড রোডে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস অতিক্রমের সময় মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালানো হয়। অবরোধকারীরা অফিসের সাটার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর চালানোর পর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোনোরকমে আগুন নিভিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকি জানান, অবরোধকারীদের মিছিল আওয়ামী লীগ অফিস অতিক্রম করার সময় ৪/৫ জন যুবক অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেয়। ঘটনার আধা ঘণ্টা পরও অফিসের ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখা যায়।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলের আবরোধ কর্মসূচির শেষে দিনে দর্শনায় মিছিল, পিকেটিং ও বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি চুয়াডাঙ্গা জেলা জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক শিক্ষক নাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দর্শনার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বিক্ষোভ মিছিল, পিকেটিং, সমাবেশ ও সড়কে টায়ার জ্বালানো। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, সেলিম উদ্দিন, আশরাফুল, আবু সাঈদ, শহিদুল, কামরুজ্জামান, সবুজ, সানোয়ার, মোতালেব, শরীফ, জাকির, লিপ্টন, সুমন, বিল্লাল, আমিনুল, হাসু, রাশেদ, সজিব, শিমুল প্রমুখ।