৭৩২ ইউপিতে ভোট : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অনেক বড় পরিসরের নির্বাচন। আমাদের এতো কর্মকর্তা নেই। এজন্য অন্য ডিপার্টমেন্টের লোকদের কাজে লাগাতে হচ্ছে। নিয়োগ করতে হচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে। তাদের ওপর আমাদের অতোটা কর্তৃত্বও নেই। তাদের নিকট থেকে যে মাত্রায় সহযোগিতা চাই, কাঙ্ক্ষিত সে মাত্রার সহযোগিতা পাচ্ছি না।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে একযোগে শুরু হবে দেশের ৩৪টি জেলার ৭৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইউপি এলাকায় টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এটি স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তরের সবচেয়ে বড় নির্বাচন হওয়ায় দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মাঝে এখন বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। ঈদ, পূজা-পার্বণে যেমন শহরের মানুষ ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে, তেমনি গ্রামের মানুষের সাথে ভোট উৎসবে যোগ দিতে শ শ মানুষ ছুটে যাচ্ছেন নিজের এলাকায়।

গতকাল সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার  জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, মো. শাহ  নেওয়াজ, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দেশে প্রথমবারের মতো ইউপিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এবার ছয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আজ মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ৭৩২ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ব্যালটসহ যাবতীয় মালামাল পৌঁছানো হয়েছে। প্রতিটি ভোটার যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, ৱ্যাব, বিজিবি, আনসারের বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

তিনি বলেন, একজন  ভোটারের নিরাপত্তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে ২০ জন  ফোর্স থাকবে। ৱ্যাব, পুলিশ, বিজিবি  মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে। তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য একজন করে বিচারিক ও চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী হবেন বলে জানিছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আজ মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ৭৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক উপজেলায় নির্বাচনের ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় মালামাল পৌঁছানো হয়েছে। প্রতিটি ভোটার যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স থাকবে। ৱ্যাব, পুলিশ, বিজিবি  মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে। এছাড়া তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য একজন করে বিচারক ও ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।

সিইসি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনী অনিয়মের কারণে ৭ জনকে ১ মাস করে কারাদণ্ড, ৬০ জনকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একজন এমপির বিরুদ্ধে মামলা ও একজনকে শোকজ করা হয়েছে। আরো কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি নির্বাচনী এলাকায় আমাদের অনুরোধে জানান। সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বরতদের দায়ী করা হবে। কেন্দ্রে রাতে নিবিড় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ভোটের আগেরদিন রাতে সিল মারার খবর পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা দায়ী হবেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজন ওসি ও ইউএনওকে বদলি ও সতর্ক করা হয়েছে। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ, সতর্ক থেকে এ ধরনের  বেআইনি কার্যক্রম প্রতিহত করবেন। সিইসি বলেন, ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটার ১  কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১ জন। মোট  কেন্দ্র ৬ হাজার ৯৮৭টি। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ৭৫৭৫ জন ও সাধারণ ২৫ হাজার ৮৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রসস্তুতির শেষ মুহূর্তে ভোটার ও প্রার্থীদের অভয় দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। নির্বাচনে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটার ব্যাপারে তিনি আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের অনিয়ম রোধে কোন ছাড় না দেয়ার নির্দেশনা দেয়ার পরও দায়িত্বে অবহেলা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ। তিনি বলেন, সংঘাত-সংঘর্ষ হলেই ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকায় মাঠে টহল শুরু করেছে বিজিবি, ৱ্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য। একই সাথে ৩৪ জেলার ১০১টি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে রয়েছেন।

কমিশনের শেষ মুহূর্তের নির্দেশনায় নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সবধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী আইনানুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোন ব্যক্তি জনসভা আহবান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোন মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। এই বিধি লঙ্ঘন করলে অন্যূন ৬ মাস বা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শনিবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া গত রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ইসি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও অনুমোদিত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তা শিথিল থাকবে।

চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩৪ জনসহ মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে প্রায় ৭ হাজার ৮৭টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।ব্যালট পেপারসহ সকল ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী সোমবার প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপিতে প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ মার্চের ভোটে ৩ হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরপর আরও ৫ ধাপে দেশের বাকি সাড়ে ৩ হাজার ইউপিতে ভোট হবার কথা রয়েছে।এ ধাপে ৭ হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৬টি। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৭ হাজার ৮৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ৩৮ হাজার ৩৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৭৬ হাজার ৭২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট ভোটগ্রহণ করবেন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন কর্মকর্তা। এতে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন। নির্বাচনের কারণে ৭৩২টি ইউপিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে নির্বাচনী এলাকায় সকল অফিস বন্ধ থাকবে।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩২টি, ২৩ মার্চ নাগরপুরে ১১টি এবং ২৭ মার্চ টেকনাফের দু’টি ইউপি, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।