১৮ দলের ৩ দিনের হরতালের দ্বিতীয় দিনেও সহিংসতা : ৫ জন নিহতসহ আহত অনেক

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনিপ নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের তিন দিনের হরতালের দ্বিতীয় দিনে ৫ জন নিহত হয়েছে। এ দিয়ে দু দিনের নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১। এর মধ্যে ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খুনের বিষয়টি হরতাল নাকি অন্য কোনো কারণে তা ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ।

জানা গেছে, সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মধ্যদিয়ে পার হয়েছে তিন দিনের হরতালের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও হরতাল সমর্থকদের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে চাঁদপুরে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আরজু, লক্ষ্মীপুর উপজেলা যুবদল নেতা নিজাম উদ্দিন, হরতাল সমর্থনকারী, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘর্ষে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যুবদল নেতা আবদুল আলিম,

কিশোরগঞ্জের দু উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উভয় দলের দু নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। সকালে কুলিয়ারচর উপজেলার দাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে বিএনপি আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আহত হন যুবদলকর্মী হাছেন আলী (৩২)। বাজিতপুরে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেলে তার মৃত্যু হয়। হাছেন আলী উপজেলার রামদী ইউনিয়নের বাগপাড়া গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে। কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে আহত কয়েকজন।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পিকেটারের ধাওয়ায় ট্রাক উল্টে চালক মো. ওয়াসিম নিহত হন। হরতালের দ্বিতীয় দিন পুলিশ-বিজিবির গুলি ও সংঘর্ষে জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্পাদক শফিকুল আলম মিলন, ভিপি শাহীন, নরসিংদী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দীন মোহাম্মদ দিপু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়াসহ ২ হাজার ৫শ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিরোধী দল। সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ। হরতালের দ্বিতীয় দিনও রাজধানীর নানা জায়গায় ঘটেছে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। হরতাল সমর্থকরা পুড়িয়ে দিয়েছে রাজধানীর দনিয়ায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হরতালের পক্ষে ও বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। সহিংস ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ অন্ততপক্ষে ৭০ জনকে আটক করেছে। ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে তাৎক্ষণিক কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাতক্ষীরায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহশিক্ষা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নেত্রকোনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, মহিলা দল সভাপতি ডা. আরিফা জেসমিন, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের এজিএস ও কলেজ শাখার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হাসান সৈকত ও সাবেক পৌর কমিশনার খোকন, ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলমের বাড়িতে ভাঙুচুর ও লুটপাট করেছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া সারাদেশের মধ্যে লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, খাগড়াছড়ি, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, মুন্সিগঞ্জ, জয়পুরহাট, ফেনী, নেয়াখালী, কুষ্টিয়ায় হরতালকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের বড় ধরনের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটেছে।

চাঁদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে আরজু হোসেন পল্টু (১৭) নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। শহরের পুরানবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোটা শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। কিশোরগঞ্জ কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের সংঘর্ষে হাসান আলী (৩৫) নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। সকালে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে গুরুতর আহত হলে তাকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৫টার দিকে তিনি মারা যান। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিএনপির দু গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবদলের এককর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আবদুল আলীম (২৮)। তিনি মির্জাপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্মসম্পাদক। চট্টগ্রামে পিকেটারদের ধাওয়ায় ট্রাক উল্টে ওয়াসিম নামে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। রোববার গভীর রাতে সাতকানিয়ার কেরানীহাটের কক্সবাজার মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সমাবেশে গুলিবর্ষণ করেছে সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এ সময় তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও তার কর্মী-সমর্থকদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।