১৬০ জন শিক্ষকের জাল সনদের খোঁজ:অনুসন্ধান অব্যাহত

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষাগতযোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে মূল সনদ জমা দিয়ে আবেদন করেছেন, নিয়োগও পেয়েছেনশিক্ষক হিসেবে। এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি বেতন-ভাতাও ভোগ করেছেন। কিন্তুঅনুসন্ধানে জানা গেলো, যে সনদ দিয়ে চাকরি জুটলো সেটি জাল। নিয়োগ বোর্ডকেফাঁকি দিয়ে বা নিয়োগ বোর্ডের কোনো কোনো সদস্যকে ঘুষ দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেনচাকরি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ রকম ১৬০ জন শিক্ষকের জাল সনদেরখোঁজ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষাঅধিদপ্তর (ডিআইএ)। এসব শিক্ষক সরকারি তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকার বেশি তুলেনিয়েছেন। জাল সনদে আরো কারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতেঅনুসন্ধান চলছে। ডিআইএ-এর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত অনুসন্ধানকরলে এরকম কয়েক হাজার শিক্ষকের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।শিক্ষকনিবন্ধন পরীক্ষার সনদ নিয়ে আলমাস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি একটি সিনিয়র আলিমমাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এমপিওভুক্ত হয়ে ২লাখ ১০ হাজার টাকা বেতনও নিয়েছেন। ডিআইএ তার সনদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্যসেটি রাজধানীর নায়েম ভবনের এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু পরীক্ষা করেদেখা গেলো, যে সনদের প্রাধান্য দিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হলো সেটিই জাল। ডিআইএএই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে তার কাছ থেকে বেতন হিসেবে তুলে নেয়া টাকাআদায়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে।

একইভাবে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ জমা দিয়ে সখিপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েরসহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সালাহউদ্দিন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে পঞ্চঘরের আমলাহার ডিগ্রি কলেজে সহকারীগ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আনজুমান আরা বেগম। তিনি ৬ লাখ টাকারবেশি সরকারি তহবিল থেকে তুলে নিয়েছেন।রাজশাহীর সেন্টার ফরইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অন ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কম্পিউটার্স’রসার্টিফিকেট জমা দিয়ে পাবনার শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের কম্পিউটার বিষয়েরপ্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাইদুল ইসলাম। কিন্তু এই সার্টিফিকেটপ্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের আস্তিত্ব খুঁজে পায়নি ডিআইএ। তাই তারসার্টিফিকেটও জাল বলে জানিয়েছে ডিআইএ।

একই কলেজের সাচিবিক বিদ্যারপ্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাসুমা জাহান। তিনি ইতোমধ্যে সরকারিবেতন-ভাতা তুলেছেন ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ডিআইএ’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নেকটার) সাচিবিক বিদ্যার সনদভুয়া। একই কলেজের ল্যাব সহকারি হিসাবে চাকরি করছেন আবদুল জলিল। ডিআইএ তারজমা দেয়া সনদ যাচাইয়ের জন্য কমার্শিয়াল কম্পিউটার সেন্টার, এ হামিদ রোড, পাবনা-এই ঠিকানায় চিঠি পাঠায়। কিন্তু সনদে বর্ণিত ঠিকানায় সনদ প্রদানকারীপ্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় প্রেরিত পত্র ফেরত আসে।শিক্ষা অধিদপ্তরের এককর্মকর্তা বলেন, জাল সনদ নিয়ে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের চাকরিচ্যুত করাহবে। তবে এই কর্মকর্তা বলেন, যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন তাদেরবিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

দায় এড়াতে পারে না গভর্নিং বডি:সংশ্লিষ্টরাবলেন, বেসরকারি স্কুল ও কলেজ গভর্নিং বডি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই নিয়োগ দেয়া হয়।এক্ষেত্রে যোগ্যতার সনদ আছে কি-না তাও যাচাই করা হয় না। এই নিয়োগ বোর্ডেমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। জালসার্টিফিকেটে নিয়োগ প্রদান বা নিয়োগে অনিয়ম থাকলে নিয়োগ বোর্ডেরসদস্যরাও দায়ী থাকবেন।পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এককর্মকর্তা বলেন, মাউশির যে প্রতিনিধি এই নিয়োগ কমিটির সাথে জড়িত তারবিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। কিন্তু গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থানেয়া হচ্ছে না।