১৫ দিন পর দলীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিজ বাসভবনে দু সপ্তার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি পুলিশি নিরাপত্তা পেলেও গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেননি। ব্যক্তিগত গাড়িতে শুধু দলীয় পতাকা ছিলো। রাতে চীনা রাষ্ট্রদূত লি চুনের সাথে ঘণ্টাব্যাপি বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। এর আগে ২৪শে ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঘোষণা করার পর তার বাসভবনের সামনে ব্যাপক পুলিশ-ৱ্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ে সর্বশেষ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এরপর ২৬শে ডিসেম্বর রাতে কার্যালয়ে যান তিনি। ২৭শে ডিসেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা জোরদারকে কারণ দেখিয়ে তার গুলশানের বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার বাসভবনের সামনে রাস্তার দু পাশে ৫টি বালুর ট্রাক ও জলকামান দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাইলে তাকে বাধা পুলিশ। এ ব্যাপারে খোদ খালেদা জিয়া তাকে কার্যত গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ করেন। তবে সরকারের তরফে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় তুলে নেয়া হয় তার পুলিশ প্রটোকল। অবরুদ্ধ অবস্থায় অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আলবার্ট কোনজে ও কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন গুলশানের বাড়িতে গিয়ে খালেদার সাথে দেখা করেন। এরপর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় একতরফা জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন পর বাসভবনের সামনে থেকে পুলিশি নিরাপত্তা সরিয়ে নেয়া হয়। এদিকে প্রটোকল তুলে নেয়ার পর ২২ জন আনসার সদস্য চেয়ে আনসার ও ভিডিপি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার দুপুরে গুলশান থানার আনসার-ভিডিপির কর্মকর্তা কাজী আহসানুল হক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তার পাঠানো প্রতিবেদন দেখে আনসার-ভিডিপি সদর দপ্তর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।  ওদিকে বিরোধী দলীয় নেতার প্রটোকল তুলে নেয়া হলেও দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া প্রাপ্য পুলিশি নিরাপত্তা পাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ জন্য তার বাসার সরকারি প্রটোকল সরিয়ে নেয়ার পর নিয়মিত কিছু নিরাপত্তাকর্মী দেখভাল শুরু করেছে। এদিকে ১৫ দিন পর গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে গুলশান কার্যালয়ে যান খালেদা জিয়া। এ সময় কার্যালয়ে সামনে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়ে কয়েক শ নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রায় ঘণ্টাব্যাপি ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি চুনের সথে বৈঠক করেন প্রধান বিরোধী জোট নেতা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি চীনা রাষ্ট্রদূত। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমান উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিরোধী নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী, ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ফাইয়াজের স্ত্রী। এরপর পর্যায়ক্রমে বিরোধী নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন দলের মহিলা নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মণি, রাশেদা বেগম হীরা, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা খান, শামা ওবায়েদ। এরপর পেশাজীবী নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরি এসএ ইসলাম, প্রফেসর বোরহানউদ্দিন খান, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।