১৪৪ ধারা ভেঙে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ : সংঘর্ষ গুলি : নিহত ৮

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ২৫ অক্টোবর ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ কেন্দ্র করে সারাদেশে ৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬ জন বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মী। অপর দুজন জামায়াত-শিবিরকর্মী। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০ জেলা ও উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এর মধ্যে বেশ কিছু স্থানে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

জানা গেছে, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রায় ২৫ জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে আহত হয়েছেন প্রায় সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে বিজিবির সাথে সংঘর্ষ হয় বিএনপি সমর্থকদের। স্থানীয় বিএনপির দাবি বিজিবির গুলিতে তাদের তিন কর্মী নিহত হয়েছেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বিএনপির তিন কর্মী নিহত হন। এছাড়া নীলফামারীর জলঢাকা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারীতে দু জামায়াত-শিবির কর্মী নিহত হন। এদিকে পাথরঘাটা ও ফরিদগঞ্জে আজ হরতাল ডেকেছে ১৮ দল।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রশাসনের দেয়া ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করতে গিয়ে বিজিবির গুলিতে স্থানীয় ৩ বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় বিজিবি। এতে আহত হয়েছে শতাধিক। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহতরা হলেন, উপজেলা হালকাকারা ২ নং ওয়ার্ডের বেলাল উদ্দিন বাদশা এবং কাকারা এলাকার মিজানুর রহমান। তবে বিএনপির দাবি মোতাবেক নিহত অপর একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। চকরিয়া পৌর বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার জানান, উপজেলার কাকারা এলাকায় বিজিবির নেতৃত্বে গুলিতে একজন ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে হামলায় চিরিঙ্গা জনতা মার্কেট এলাকায় একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ২ জন নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ বড়ুয়া।

উল্লেখ্য, চকরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের পৃথক সমাবেশকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল দুপুর ১২টায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ আদেশ দেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আরিফ (৩০) জাহাঙ্গীর (২৮) ও শরীফ (৩০) নামের তিনজন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সাহেদ সরকার, বিএনপির প্রবীণ নেতা জয়নাল আবেদীনসহ অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে মুহূর্তে সংঘর্ষ বেধে যায়। শুরু হয় দু পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে আরিফ নিহত হন।

এদিকে, জাহাঙ্গীর (২৮) ও শরীফ (৩০) নামের গুলিবিদ্ধ দু বিএনপি নেতাকে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল ডাকা হয়েছে।
বিকেলে উপজেলা সদর জলঢাকায় পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশের গুলিতে মোসলেম উদ্দিন (২০) নামের এক শিবিরকর্মী নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে ৪টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করলে পুলিশ জলঢাকা বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাধা দেয়। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। মুহূর্তে গোটা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেলের আঘাতে এবং টিয়ারসেল ও রাবার বুলেটে পথচারীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। মারমুখো জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ৩টি বাস ও ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে শিবিরকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ভারি অস্ত্রের সাথে শতাধিক রাবার বুলেট ও প্রায় ২০ রাউন্ড টিয়ারসেল ব্যবহার করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৪ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মোসলেম উদ্দিন নামের এক শিবিরকর্মী মারা যায়। এ ঘটনায় গোটা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ীতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে এক জামায়াতকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ দাবি করেছে স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইউনিয়ন জামায়াত নেতা হবি মোল্যা ও বিএনপি নেতা অলি মোল্যার নেতৃত্বে কাশিমাড়ী বাজারে মিছিল করে। এ সময় মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পাশের একটি বাড়িতে থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়। ইটটি জামায়াত কর্মী শফিকুলের (৪০) বুকে লাগে। এতে তিনি মারা যান। কাশিয়ানী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির শহীদুল ইসলাম এ কথা জানান। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো হামলা করা হয়নি। স্ট্রোক করে একজন মারা গেছে শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান, থানা অফিসার ইনচার্জ ছগির মিয়া, ওসি তদন্ত তারক বিশ্বাসসহ পুলিশ ফোর্স ও বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা বলেন, জামায়াতকর্মীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর শহরে শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীর মাঝে সংঘর্ষে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ, ৮ পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নোয়াখালী জেলা শহরে পুলিশ-১৮ দল সংঘর্ষ এসপি আনিসুর রহমানসহ আহত হন দু শতাধিক। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন ৭০। জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হবিগঞ্জে ১৮ দলের বিক্ষোভ মিছিলকে বাধা দেয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এ সময় ধাওয়া দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা শহরে ১৫টি সিএনজি ও টমটমসহ ১৫টি যান ভাঙচুর করেছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগের হামলায় ২০ নেতাকর্মী আহত হন। শরীয়তপুর জেলায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় দু দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা-পাল্টি হামলায় জেলা যুবদল আহ্বায়ক, ছাত্রদল আহ্বায়ক ও পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতিসহ কমপক্ষে ৭ জন আহত হন।

সাতক্ষীরায় ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে জামায়াত-শিবির গতকাল সকাল ৯টায় শহরতলির কদমতলা মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। প্রায় একই সময়ে তারা বিভিন্ন উপজেলায় মিছিল ও সমাবেশ করে। জামায়াত-শিবিরের মিছিলকারীরা হাতে ধারালো দা, কুড়াল, হাতুড়ি, বাঁশের লাঠি ও কাঁধে ককটেলের ব্যাগ নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘর্ষে ৬ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। জামায়াতের উপজেলা আমীরসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মাদারতলা গ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পটুয়াখালী গলাচিপায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দু গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বিএনপির ৫ কর্মী আহত হয়েছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পুলিশের হামলায় বিএনপির ৮ সমর্থক আহত হয়েছেন। গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি ও উপজেলা ছাত্রলীগের একই জায়গায় সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাথে বিএনপির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় দলের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। রাঙ্গামটিতে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে ভাঙচুর ও সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে চার পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। পঞ্চগড় পুলিশের সাথে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন আহত হয়েছে। বিকেলে আটোয়ারী উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। ঠাকুরগাঁও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে পুলিশসহ দু পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার শুকলালহাট এলাকায় ১৪ দল ও ১৮ দলের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ উভয় দলের অনন্ত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দোকানপাট ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহে ১৮ দল ও ছাত্রদল সাথে সংঘর্ষে ২০ আহত হয়েছেন। গফরগাঁও ও গৌরীপুরে বিএনপির মিছিলে পুলিশের বাধা লাঠিপেটায় আহত ২৫ জন ও ধোবাউড়ায় আওয়ামী লীগ বিএনপি সংঘর্ষ ৬ জন আহত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের ২৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পাবনার চাটমোহর পৌর এলাকার পুরাতন বাজারে বিএনপি ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীনসহ ৫ জন আহত হয়েছে।