১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : মেহেরপুরের দুটি আসনের প্রার্থীদের দল একটাই : প্রতীক দুটি

মেহেরপুর অফিস: ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুরের দুটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই ভোট করছেন। এক্ষেত্রে দুটি আসনেই প্রার্থীদের দল একটাই প্রতীক ২টি। নিরুত্তাপ ওই ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা না থাকলেও নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মরিয়া। এ নির্বাচনের জয়লাভ পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকেট পেতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তারা।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নেই কোনো উৎসাহ আর আশা-আকাঙ্খা। চায়ের দোকানে নেই আলোচনার ঝড়। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের খবর চাওর হয়ে উঠেছে। তারপরও বহিষ্কৃতরা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নির্বাচনে জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

আগামীকাল রোববার সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরের ২টি আসনেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুধু সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়ে গেলে স্বস্তি পাবেন বলে মনে করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এমন প্রত্যাশা তাদের সকলের। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের ২টি আসনের মধ্যে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) গঠিত হয়েছে সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা, ৫টি ইউনিয়ন ও মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে। এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ২৪৯ জন। আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৭ জন। হিসাব করে দেখা গেছে পুরুষের থেকে ৩ হাজার ৮৩৮ জন মহিলা ভোটার বেশি। এ সকল ভোটারদের জন্য ৯৮টি ভোটকেন্দ্রে ৫২৯টি ভোটকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসন গঠিত হয়েছে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে। এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ২৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ১১৫ জন। আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬ হাজার ১২১ জন। এ আসনেও পুরুষের চেয়ে ৪ হাজার ৬ জন মহিলা ভোটার বেশি। এ সকল ভোটারদের জন্য ৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৪৩৪টি ভোটকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে মেহেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মেহেরপুর-১ আসনের এমপি মরহুম ছহিউদ্দিনের ছেলে দোদুল ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ের জন্য আশাবাদী। অপরদিকে মেহেরপুর-১ আসনের জন্য ১০জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারসহ যাচাই-বাচাইয়ে বাদ পড়েন ৮ জন। নির্বাচনে বিজয়ী হতে মেহেরপুর শহর (পৌর) আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে আছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি ভোট করছেন। তাই মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে ও তার সমর্থক জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সদর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের স্ব-স্ব কমিটিকে চিঠি দিয়ে সুপারিশ করেছেন। এরপরও মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মরহুম ফয়মুদ্দিন শেখের ছেলে মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম তার ফুটবল প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। তিনি ইতোপূর্বে দলীয় সমর্থন নিয়ে ৩ বার পৌর মেয়রের পদে ভোট করেছেন। এ নির্বাচনে তিনি জয়ের জন্য আশাবাদী।

মেহেরপুর-২ আসনে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। তিনি জয়ের জন্য আশাবাদী হলেও তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক এমপি মকবুল হোসেন। তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছেন। দলের একটি বড় অংশ তার পক্ষে কাজ করছেন বলে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী। তিনি স্মরণ রেখেছেন, ১৯৯৬ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (টেলিভিশন প্রতীক) হয়ে তিনি জয় লাভ করেন। ওই সময় শেখ হাসিনা তাকে দলে বরণ করে ১৫১ আসনে সরকার গঠন করেন। স্নাতক পাস এমএ খালেক গাংনী শহরের বাজারপাড়ার মরহুম মোজাহার আলী বিশ্বাসের ছেলে। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অপরদিকে সাবেক এমপি মকবুল হোসেন গাংনী উপজেলার মিনাপাড়ার মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস মকবুল হোসেন বর্তমানে গাংনী শহরে ভাড়াবাসায় বসবাস করছেন। তিনি আরো দু বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দু বার উপজেলা নির্বাচন করেছেন। তবে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট করার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছেন। একই সাথে গাংনীর পৌর চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহম্মদ আলী, গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মোট ৭ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রে পত্র পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) প্রার্থী মো. আব্দুল হালিম বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। গাংনী শহরের থানাপাড়ার মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ৮ম শ্রেণি পাস মো. আব্দুল হালিম মেহেরপুর, গাংনী ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দু বার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করে অকৃতকার্য হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, মেহেরপুর জেলার ২টি আসনের মোট ১৭৮টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত রাখা হবে। তিনি আরো বলেন প্রতি ৩টি কেন্দ্রের জন্য ৱ্যাব, পুলিশ ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হবে। প্রত্যেক টিমে বিশেষ করে বিজিবির সাথে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।