হিংসার আগুনে জ্বলছে দেশ : সিরাজগঞ্জে বলি হলো শিশু : ফের বাড়ানো হয়েছে অবরোধ

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে জামায়াতের হরতাল ছিলো ঢিলেঢালা : অবরোধ কর্মসূচি পালন মিছিল ও সড়কে আগুন

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধে দেশজুড়ে সহিংসতা চলছেই। এবার সহিংসতায় প্রাণ গেল পথচারী এক শিশুর। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জে অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সুমন ওরফে হৃদয় নামের ওই শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় জামায়াত। ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হতে না হতে এ অবরোধ লাগাতার করে আগামী শুক্রবার ভোর পার্যন্ত বাড়িয়েছে।

গতকাল জামায়াতের দেশ ব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চুয়াডাঙ্গায় তেমন প্রভাব ফেলেনি। জামায়াত আজও সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। অবরোধ সফল করতে চুয়াডাঙ্গা একাংশ বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিকেল তিনটার দিকে জেলা ছাত্রদলের ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা কলেজ সড়কের আত্মবিশ্বাস কার্যালয়ের অদূরে সড়কে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। ডিঙ্গেদহতে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে টানা দু ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। গতকালও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন মেহেরপুর শহরবাসী। গাংনী গতকাল ছিলো অনেকটাই শান্ত। ঝিনাইদহে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে সহিংসতা না হলেও আলমডাঙ্গার হাপানিয়া বাজারে হিংসার আগুনে ঝলসে গেছে আওয়ামী লীগের ৬ জন। এদিকে জীবননগর উথলী স্টেশনের অদূরে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রেলওয়ের ৬ জন কর্মীকে রক্তাক্ত জখম করেছে।

বিএনপিসহ ১৮ দল আবার অবরোধ বাড়িয়েছে। চলমান অবরোধ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলবে। এদিকে অন্য দিনের মতো বিভিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার অবরোধের তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ সোমবার গোপন অবস্থান থেকে ভিডিও বার্তায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন। সরকার দাবি না মানায় অবরোধ বাড়ানো হয়েছে বলে ভিডিও বার্তায় বলা হয়েছে। অবরোধে নিহতদের স্মরণে শুক্রবার বাদজুম্মা সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা এবং থানায় গায়েবানা জানাজা এবং ১৫ ডিসেম্বর সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ১৮ দল। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা করবে বিরোধীদল। আলোচনাসভার স্থান পরে জানানো হবে বলে সালাহউদ্দিন ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন। অবরোধ লাগাতার করার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ ব্যবসায়ীসহ জনসাধরণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে।

গতকাল অবরোধে রাজধানীর গুলশান, সায়েদাবাদসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশের সাথে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সায়েদাবাদে পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আশরাফুল ইসলাম (২৭) নামে এক শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার সকালের দিকে সায়েদাবাদ পেট্রোল পাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সায়েদাবাদ পেট্রোল পাম্পের সামনে হঠাত জড়ো হয়ে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। পুলিশ এসে তাদের ধাওয়া দিলে জামায়াত কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুঁড়লে শিবিরকর্মী আশরাফুলের পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও পৌর ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহীদ হাসান চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় হাসান চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশের যুগ্মসম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, পৌর জামায়াত ইসলামীর আমির মফিজুর রহমান, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রউফ, পৌর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজান খান, জেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, জেলা ওলামাদলের আহ্বায়ক মাও. আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা যুবদল একাংশের আহ্বায়ক মহাবুল হক, থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান মহলদার রিন্টু, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আজিজুল হক, তানভির আহাম্মেদ, জেলা তরুন দলের যুগ্মআহ্বায়ক সাইদুর রহমান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক হাফিজুর রহমান মুক্ত প্রমুখ।

এদিকে চুয়াডঙ্গা ডিঙ্গেদহ ১৮ দলের উদ্যোগে ডিঙ্গেদহবাজারে বিক্ষোভ মিছিলি বের করা হয়। মিছিলটি ডিঙ্গেদহ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরাস্তা মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে। বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানা আমির আব্দুর রউফ মিয়া, থানা বিএনপি একাংশের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরনবী সামদানি, সাধারণ সম্পাদক রুমজান আলী, সহসভাপতি রায়হান উদ্দিন, যুগ্মসম্পাদক আব্দুল মান্নান, সদর থানা যুবদল একাংশের আহ্বায়ক মহাবুল হক, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মাস্টার, ফারুক হোসেন, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপি একাংশের সভাপতি মসিউর রহমান মিলন, সহসভাপতি আব্দুস ছাত্তার প্রমুখ। পরিচালনা করেন মোকলেচুর রহমান লিটন।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে সাগান্না ও সাধুহাটি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছে। ত্রিমহনী থেকে মিছিলটি শুরু করে ডাকবাংলা হাজি মার্কেটে শেষ হয়। সভাপতিত্ব করেন সাধুহাটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আনাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সাগান্না ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খলিলুর রহমান, সাগান্না ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মেম্বার, সাগান্না ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, জেলা ছাত্রদলনেতা জাবির খান রুস্তম, ওলিয়ার মেম্বার, জিন্দার মেম্বার প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে পিটিআই মোড়ে সাবেক এমপি বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মো. ফারুক হুসাইন, জামায়াতের সদর উপজেলা আমির কাজী রুহুল আমিন, সদর উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দীন মোল্লা, আমদহ ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি খালেকুজ্জামান মজনু মেম্বার, বিএনপি নেতা রাকিবুল ইসলাম, ছাত্রনেতা সোহেল হোসেন প্রমুখ। এছাড়া তিনটি সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে। গতকাল সোমবার কাকডাকা ভোরের আগেই ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটা মোড়, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে বামনপাড়া ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর বাজারের মোড় অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করে। রাজনগরে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সড়কের ওপরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। কায়েম কাটার মোড়ে ৫/৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই সময়ে মেহেরপুর শহরের বড়বাজার মোড় ও হোটেলবাজার মোড়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে,  আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপি আলমডাঙ্গার আলমডাঙ্গা-ঝাউদিয়া-ঝিনাইদহ সড়ক অবরোধ করে। অবরোধে ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা যোগ দেন। পরে শাদাব্রিজ মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার, উপজেলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু, আলমডাঙ্গা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ টিপু, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক ডাবু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান, হান্নান উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিল্টন মল্লিক, পৌর যুবদলের মঞ্জু, মুকুল, গোলাম হোসেন প্রমুখ।

অপরদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে ওই প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য শফিকুল আজম ডালিম। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক জেডএম তৌকিফ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য সৈয়দ লিমন, জেলা ছাত্রদল সদস্য রহিদ, রানা, শওকত, আলা প্রমুখ। জেলা ছাত্রদলের সদস্য ফেরদৌস বাপ্পির উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন সাদ্দাম, শান্ত, জনি, আরিফ, সাগর, রফিকুল প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা আরও ব্যুরো জানিয়েছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাতিলের দাবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে গতকাল সোমবার সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলা জামায়াত-শিবির পশ্চিমশাখা  আসমানখালী বাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার লক্ষ্যে শালিকা মোড়ে অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে জামায়াতের শ শ মহিলা নেতাকর্মী লাঠি নিয়ে মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় আসমানখালী ক্যাম্প পুলিশ মিছিলে বাধা প্রদান  করে। ঘটনাস্থলে ১টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় হরতালকারীরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। আলমডাঙ্গা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বিক্ষোভ থেকে ফেরার পথে সোহাগ মোড়ে মহিলা জামায়াতকর্মীদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগে ভাঙবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ভোগাইল বগাদীর রওশন আলীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে জামায়াতের মহিলা নেতা-কর্মীরা।