হাইকোর্টের আদেশ জাল করে গড়াইটুপি মেলা চালানোর চেষ্টা!

 

শুকুর আলীসহ তার ৪০-৫০ জন সহযোগীকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি মেলার মেয়াদ দুই মাস অনুমতি বৃদ্ধির হাইকোর্টের কাগজ সঠিক না হওয়ায় ইজারাদার শুকুর আলীসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সদর থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সদর উপজেলার তিতুদহ গ্রামের মৃত সোবহানের ছেলে হাসান গাফফার সেলিম মেলায় সার্কাস যাত্রাপালা, ৱ্যাফেল ড্র ও গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকান পরিচালনার অনুমতি লাভ করে। হাসান গাফফার সেলিম নামে কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। তিতুদহের আব্দুল লতিফের ছেলে শুকুর আলী হাসান গাফফার সেলিমের নামে মেলা পরিচালনা করেন। ৭ আগস্ট মেলা শেষ হয়।

এরপর ৯ আগস্ট শুকুর আলী মোবাইলফোনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান, গড়াইটুপির মেলা দুই মাসের অনুমতি লাভ করেছে। এ বিষয়ে ডাকপিয়ন মারফত ওসির কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি খুলে দেখা যায়, কাজল সরকার পিটিশনার ভার্সেস বাংলাদেশ অ্যান্ড আদার্স জিয়াউর রহমান প্লেটো ফর দি পিটিশনার প্রেজেন্ট এমএস জাস্টিস সালমা মাসুদ চৌধুরী অ্যান্ড জাস্টিস মো. হাবিবুল গণি লেখা পত্রের ফটোকপি। যাতে গড়াইটুপি মেলায় দুই মাসব্যাপী যাত্রা, সার্কাস, ৱ্যাফেল ড্র, ওয়ানটেন, ওয়ান এইট, চরচরি, ডাইস, ব্রুস লটারি, বউ লটারি ও হাউজিসহ বিভিন্ন জুয়ার অনুমতি করেছে মর্মে লেখা আছে। অনুলিপি স্বরাষ্ট্র সচিবসহ মোট ১০ জনকে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওই কপিতে হাইকোর্টের কোনো মেমো নম্বর নেই। পত্রের নিচে টাইপ বাই মাহফুজ, সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট সাইফুল ইসলাম, সহকারী রেজিস্ট্রার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ মোট ছয়টি স্বাক্ষর একই হাতের এবং একই কলমে গত ১১ আগস্ট মর্মে প্রতীয়মান হয়। পত্রের খাম পর্যালোচনা করে দেখা যায় ১৭৬১৯/ভিসি লেখা থাকলেও কোনো তারিখ নেই। জিপিও ঢাকার কাউন্টার নম্বর ২, জিইপি নম্বর ৪৭১, তারিখ ৭ আগস্ট মোতাবেক অফিসার ইনচার্জ চুয়াডাঙ্গা থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে পত্রটি ১১ তারিখে ইস্যু, অথচ ৭ তারিখে জিইপিও থেকে প্রেরণ করা হয়েছে। আর ডাকযোগে ৯ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় গৃহীত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার জিডি নম্বর ৯৭২, তারিখ ০৯/০৮/২০১৬ খ্রি.।

মেলার পূর্বে ইজারাদার আসামি মো. শুকুর আলী ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জন ব্যক্তি হাইকোর্টের আদেশ জাল করে গড়াইটুপি মেলায় ৯ আগস্ট বিকেল চারটা হতে ১০ আগস্ট ভোর ৫টা পর্যন্ত যাত্রা, সার্কাস, ৱ্যাফেল ড্র, ওয়ানটেন, ওয়ানএইট, চরচরি, ডাইস, ব্রুস লটারি, বউ লটারি ও হাউজিসহ বিভিন্ন জুয়া চালু করে। পত্রটি পর্যালোচনা করে জাল মর্মে সন্দেহ হওয়ায় ১০ আগস্ট পুলিশ সুপার অফিসিয়াল ইমেল থেকে হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পালকে আদেশের কপি প্রেরণ করলে তিনি তা জাল বলে জানান।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই গড়াইটুপি মেলা ১০ দিনের জন্য জেলা প্রশাসন শুকুর আলীকে সর্বমোট ৪৮ লাখ টাকায় ইজারা দেয়। মেলা শেষ হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস শুকুর বাঙালিকে দেয়া হয়। তিনি পরদিনই মেলা চালাতে অপরাগতা জানান। ২৭ জুলাই মেলার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস হাসান গাফফার সেলিমকে ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মেলার অনুমোদন দেন। তারপরই হাইকোর্টের ভুয়া আদেশ বলে মেলা চালাতে গিয়ে শুকুর আলীসহ তার সহযোগীরা মামলার আসামি।