হরিণাকুণ্ডুর ভবানীপুর হাট ইজারা দিয়ে সরকারের গচ্চা ৩১ লাখ টাকা!

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর হাট ইজারা প্রদানে ব্যাপক ঘাপলাবাজীর অভিযোগ উঠেছে। বাংলা ১৪২৪ সালের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস) গায়েব করে প্রায় ৩১ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। এ বছর হাট ইজারার সময় গত বছরের তুলনামূলক মূল্য বিবরণী খুঁজে না পাওয়ায় কম মূল্যে আবারও হাট ইজারা প্রদান করেছেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ইজারাদার আজব আলী, আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা অভিযোগ করেন, গত বছর তারা হরিণাকুণ্ডুর ভবানীপুর সাধারণ হাট ও পানের হাট ইজারায় অংশ গ্রহণ করেন। তারা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতা হওয়ায় হাট পাননি। উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বার এক বছরের জন্য হাট দুইটির ইজারা লাভ করেন।
ওহিদ মেম্বার সাধারণ হাট ১৮ লাখ টাকা ও পান হাট ১৭ লাখ টাকা দর দিয়ে পেয়ে যান। গত বছর ওহিদ মেম্বার সর্বনিম্ন দরেও আরেকটি দরপত্র দাখিল করেন। এরপরও তুলনামূলক মূল্য বিবরণ কমিটি উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বারকেই ভবানীপুরের দুই হাট ইজারা দেন। পরবর্তীতে উচ্চ দরের সিএস গায়েব করে কাগজপত্র জালিয়াতি করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে হাটটি প্রদান করেন হরিণাকু-ুর সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন। দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে দ্বিতীয় দরদাতা আজব আলী জানান, তিনি সাধারণ হাট ১৬ লাখ টাকা ও পান হাট ১৫ লাখ টাকা দর দিয়ে ওই সময় মোট ইজারার শতকরা ৩০% হিসেবে ৩ লাখ ৬১ হাজার সিডি জমা দেন হরিণাকুণ্ডুর ভবানীপুর জনতা ব্যাংক শাখায়। আজব আলীর প্রশ্ন ইউএনও মনিরা পারভিন দুর্নীতি, স্বজনপীতি ও অনিয়ম না করলে তাদের দাখিল করা টেন্ডারের কাগজপত্র কোথায় গেলো? ১৪২৪ সালের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস) অফিসে সংরক্ষণ থাকলে তো ১৪২৫ সালে ভবানীপুরের হাট এতো কম টাকায় ইজারা হতো না বলেও তিনি জানান।
এ বছর ভবানীপুর সাধারণ হাট ৫ লাখ ২০ হাজার ও পান হাট মাত্র ৩৫ হাজার ৮৫০ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। গত বছর হাট ইজারায় অংশগ্রহণকারী ভবানীপুর গ্রামের বীর বশির উদ্দীন অভিযোগ করেন, ১৪২৪ সালে তিনি শুধু পান হাটের দর দিয়েছিলেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে তিনি ৭০ হাজার টাকার সিডি করেন। তিনিও এই দুর্নীতির বিচার চান। দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ইজারা গ্রহিতা আজব আলী, আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা গত ২৭ জানুয়ারি হরিণাকু-ু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও দফতর থেকে সেটি সিল মোহরযুক্ত স্বাক্ষরে রিসিভও করা হয়। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কোনো তদন্ত করেননি বরং ইউএনও সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন ৩০ বছরের সিএস যাচাই করে দেখা গেছে ভবানীপুর হাটের বার্ষিক ইজারা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে এ বছরও কম টাকায় হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার কাছে হাট নিয়ে কেও অভিযোগ করেননি বলেও ইউএনও সাংবাদিকদের জানান।
বিষয়টি নিয়ে হরিণাকু-ুর সাবেক ইউএনও ও বর্তমান কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন জানান, ভবানীপুরের হাট নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। হাটের সিএস অফিসেই ছিলো বলে তিনি জানান। হরিণাকু-ু উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মজিদ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা হাট ইজারা কমিটির সভাপতি। তারপরও গত বছর আইনের অজুহাতে আমার কাছ থেকে ফাইল নিয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, ভবানীপুরের হাট নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা সঠিক। এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোদেজা খাতুন জানান, তিনি বিষয়টি একটু একটু শুনেছেন। তবে এটি তার এখতিয়ার বহির্ভূত। গত বছরের হাট ইজারাদার ওহিদ মেম্বার কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন অস্বীকার করে বলেন, আমি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে হাট পেয়েছি। কাউকে টাকা দেইনি।