হরতালের শেষ দিনেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ : বগুড়ায় দুজন নিহত আজ জামায়াতের শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল সমাবেশ : জীবননগর ও ঝিনাইদহে ট্রাক ভাঙচুর

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। শেষ দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকের পর বুধবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করবে আজ।

সূত্র বলেছে, আগামী সপ্তার ১৯, ২০ ও ২১ নভেম্বর আবারও দেশব্যাপি হরতাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জোটের নেতাদের সাথে আলোচনার পর তা চূড়ান্ত করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, বিএনপির একাংশসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকরা পৃথক স্থানে থেকে মিছিল বের করলে গতকালও পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ সুপারকেও পিকেটিং মিছিলের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে। মিছিলের স্লোগান মাঝে মাঝেই শহরের সাধারণ ব্যবসায়ীদের চমকে দেয়। ক্ষণিকের জন্য দোকানপাট বন্ধ হলেও হরতালের শেষ দিনে অধিকাংশ দোকানই খোলা ছিলো। ব্যাংক-বীমায় লেনদেনে ত্রুটি হয় এবং অফিস আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। বাস-ট্রাক তেমন চলেনি। জীবননগরে বেশ কযেকটি ট্রাক ও থ্রিহুইলার ভাঙচুর হয়েছে। ঝিনাইদহে ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করেছে পিকেটরেরা। পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। মেহেরপুর গতকালও ছিলো বিএনপি-জামায়াতের মিছিল সমাবেশ। গাংনীতে আওয়ামী লীগ হরতালবিরোধী মিছিল করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ হরতালবিরোধী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে।

দেশজুড়ে সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহতসহ বগুড়ায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চারদিনের হরতালে পাঁচজন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হলেন। বগুড়ার শেরপুরে মঙ্গলবার গভীররাতে পিকেটারদের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সবজি বোঝাই ট্রাক উল্টে ট্রাক মালিক জিয়াউর রহমান ও সবজি ব্যবসায়ী আশাদুল হক নিহত হন। এদিকে রাজশাহী, রংপুর, লক্ষ্মীপুর ও ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও হরতালবিরোধীদের সাথে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হরতালে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারাদেশে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির উদ্যোগে ৮৪ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিনে হরতালের সমর্থনে শহরে পিকেটিং মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সকাল ১০টায় অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলার নেতৃত্বে মিছিলটি বের হয়ে শহীদ হাসান চত্বরের দিকে অগ্রসর হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেট গেটের সামনে বাধা দিলে ওই স্থানেই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম. জেনারেল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং পুলিশবাহিনীকে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ না করে দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি সরকার যাতে করে কোনো পাতানো নির্বাচন এদেশে না করতে পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল সফল করার জন্য জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জেলাবাসীকে অভিনন্দন জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর পৌর বিএনপির সভপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মালিক মজু, যুগ্মসম্পাদক রবিউল ইসলাম লিটন, গোলাম মোস্তফা বিমান, জেলা ওলামা দলের সভাপতি ফজলুর রহমান, অ্যাড. আকরাম হোসেন, জেলা যুবদলের সদস্য আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, ইমরুল হাসান জোয়ার্দ্দার মুকুল, আরিফুজ্জামান পিন্টু, আক্তারুজ্জামান, স্বাধীন অধিকারী, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর জামান সিজার, যুগ্মআহ্বায়ক রাজীব খান, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান হীরা, পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রভাষক আতিয়ার রহমান, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান লিটন, পৌর বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, গোলাম কিবরিয়া তিস্তা, মজনু মণ্ডল, শাহনেওয়াজ কালু, আহসান হাবীব মুক্তি, শ্রমিক দলের নেতা শহীদ হোসেন লাড্ডু প্রমুখ।

এদিকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর জামান সিজারের নেতৃত্বে এক পিকেটিং মিছিল বের হয়। মিছিলটি ফেরিঘাট রোড হয়ে বড়বাজার চৌরাস্তা পৌঁছুলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বাধা অতিক্রম করে শহীদ আবুল কাশেম সড়ক হয়ে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে যায় এবং কার্যালয়ের সামনে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর জামান সিজারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক জাহেদ মো. রাজীব খান। সমাবেশে শরিফ উর জামান সিজার বলেন, বর্তমান সরকার পাঁচটি বছর শাসন আমল ছিল খুন, গুম, দুর্নীতি, লুটতরাজের স্মারক। তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় এসে পৌঁছেছে। মহাজোট সরকার ৫টি বছর জনগণের কাঁধের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই ভেবে সরকার যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীল নকশায় মহাজোট সরকার যে এক দলীয় নির্বাচন দিতে যাচ্ছে তা এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দীপ্ত প্রত্যয়ে বলিয়ান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশের এ ক্রান্তি লগ্নে গণমানুষের গণ আন্দোলন গড়ে তুলে ফ্যাসিস্ট সরকারের অচলায়তন গুঁড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পিকেটিং মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ হরতাল প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জস্থ  অস্থীয় কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগ জেলা সভাপতি মো. শরীফ হোসেন দুদুর নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শহীদ হাসান চত্বরে শেষ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধূরী জিপু, অ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ, জেলা যুবলীগের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মিলন, সদর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লাল্টু, সাবেক কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিপ্লব, সাধালণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান কালু, ঝেলা ছাত্রলীগ নেতা শরিফ উদ্দীন, মেহেদী, যুগ্মসম্পাদক ফরিদ হোসেন, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মতি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বুলবুল, ভুলন, শিমু, ইশা, জানি, সাংগঠনিক সম্পাদক য়ৈসদ ফরিদ আহাম্মেদ, সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি জাবিদ, সাধারণ সম্পাদক স্বজল, কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জানিফ প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিংকু হোসেন জোয়াদ্দার।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশ নেতৃবৃন্দ জেলা ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে পিকেটিং মিছিল বের করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে মিছিলটি কেদারগঞ্জস্থ কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে ফের একই স্থানে ফিরে সমাবেশে আয়োজন করা হয়। পৌর বিএনপি একাংশের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির একই অংশের যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক রউফুন নাহার রীনা, দফতর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামীর জেলা শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, হাবিবুল্লাহ ছটি, জামায়াতে ইসলামী নেতা আব্দুর রউফ প্রমুখ। বক্তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে বাধ্য করার কথা পুনর্ব্যাক্ত করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা গতকাল তাদের দলীয় কার্যালয়ে এক সমাবেশের আয়োজন করে। এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির একাংশের সহসভাপতি আইনুর হোসেন পচা। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি খুলনা বিভাগীয় তৃণমূল দলের নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল। কোর্টমোড়স্থ কার্যালয় থেকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। ফলে কার্যালয়ে ফিরে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা আরশেদ আলী কালু, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, কৃষকদল নেতা হামিদুল হক নেতাজী, পৌর সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব আজাদুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, জামায়াত-বিএনপি ইস্যুবিহীন হরতাল ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আলমডাঙ্গার ছাত্রলীগের উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা শাহীন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান পিন্টু, তরিকুল ইসলাম টুকুল, রমজান, রানা, টিপু, খয়বার, পৌর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তমাল, থানা প্রচার সম্পাদক জাইদুল, পৌর ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক মুন্না, কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পিন্টু, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মুকুট, সুমন, রুবেল, সালাম, সজীব, ডাবলু, শুকুর, মিঠু, অভি, আকাশ, দিগন্ত, জুবায়ের, শাকিল, অপু ও থানা সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সাইদ্দিন সাইকা প্রমুখ।

বক্তারা জামায়াত-বিএনপি হেফাজতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবৈধ হরতাল প্রতিহত করার আহ্বান জানান এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সামসুল আবেদীন খোকনের হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান করা হয়।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, হরতালের শেষ দিনে ঝিনাইদহে সড়ক অবরোধ ও ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। নাশকতার আশঙ্কায় সদর উপজেলার কোরাপাড়া ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা থেকে তিন বিএনপিকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় এক সমাবেশে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন মাহফুলুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুল বারেক, রুহুল আমিন, অলিয়ার রহমান ও রাজলু হোসেন বক্তব্য রাখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া জেলা শহরের আরাপপুর, হামদহ, পবহাটি এলাকায় হরতাল সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে শিবিরের ঝটিকা মিছিল থেকে ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ অফিস আরও জানিয়েছে, ঝিনাইদহে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ১৮ দলের ডাকা টানা ৮৪ ঘণ্টা হরতালের নামে গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, বোমাবাজি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১২টার দিকে শহরের এইচএসএস সড়কে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে মিছিলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়। মিছিল থেকে হরতালবিরোধী নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ, আব্দুল খালেক, মকবুল হোসেন, আক্কাস আলী, গোলাম সরোয়ার সউদ, লিয়াকত আলী, আব্দুস সামাদ, অশোক ধর, আসাদুজ্জামান, আব্দুল মালেক, নজরুল ইসলাম, একরামূল হক লিকু, সরোয়ার জাহান বাদশা, আশরাফুল ইসলাম, বিশ্বজিত সাহা মিথুন প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, হরতাল দিয়ে মানুষ খুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কোনো লাভ নেই। সময়মতো সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো বাধাই কাজে আসবে না। তাই সংঘাতের পথ পরিহার করে নির্বাচনের উৎসবে যোগ দিন। এছাড়া সমাবেশে নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টিকারী বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।

ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন,  গতকাল আলমডাঙ্গায় হরতালের সমর্থনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে হাজি মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসরাফ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগ্রাম কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ সরকার যতোই গ্রেফতার, নির্যাতন, হামলা, মামলা করবে জনগণের আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। অতীতের কোনো সরকার এভাবে টিকে থাকতে পারেনি এবারও পারবে না। তিনি বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সংগ্রাম কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম, উপজেলা সংগ্রাম কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুল জব্বার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এমদাদুল হক ডাবু। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা রেজাউল করিম, বোরহান উদ্দিন, হাসানুজ্জামান, রেজাউর রহমান, মহিনুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, আলী হোসেন, ডা. লতিফ, ডা. আলাউদ্দিন, জমির উদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান, যুবদল নেতা মাগরিবুর রহমান, ওহিদুল ইসলাম বাবু, গোলাম মোস্তফা, নাসির উদ্দিন, আব্দুল খালেক, ছাত্রদল নেতা তৌফিক খান, লিমন, শওকত, ডালিম, বাপ্পি, রহিদ, সুজন, সুইটস, সাগর, সেলিম, রুবেল, তনু, শুভ, আকাশ প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, হরতালের শেষ দিনে মেহেরপুরের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ জামায়াতের ৫ কর্মী এবং মুজিবনগর থানা পুলিশ আরো দু জামায়াতকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর, মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড় ও মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। কায়েমকাটার মোড়ে ৩/৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বন্দর মোড় থেকে পিটিআই ভবন পর্যন্ত বিএনপির সাবেক এমপি মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা করা হয়। একই সময়ে আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বারের নেতৃত্বে দীনদত্ত বীজ থেকে রাজনগর মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে এক ঘণ্টা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবোরধ করে রাখে।

এদিকে মেহেরপুরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াতের সাত নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ এ অভিযান চালায়। মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, হরতালে বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন আশংকায় মেহেরপুর শহরের থানা পাড়ার নুরুল গনি (৫৬) ও জাহাঙ্গীর গনি ডাবু (৪৮), হঠাৎপাড়ার শুকুর আলী (৫৭), ও শামীম (৩০) এবং ভিটিরমাঠ গ্রামের শরিফুল ইসলামকে (৩০) আটক করা হয়েছে। মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মানিকনগর গ্রামের আনারুল ইসলাম (৪০) ও রফিকুল ইসলামকে (৪৫) আটক করা হয়েছে।

এদিকে হরতালের কারণে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল করেনি। তবে ছোট ছোট যানবাহন ও রিকশা-ভ্যান চলাচল করছে। সকালের দিকে জেলা শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিলো। তবে দুপুরের পর থেকে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়। শহরের স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো না। ব্যাংক-বীমায় সন্তর্পনে লেন-দেন হয়েছে। অফিস-আদালতে হরতালের প্রভাব না পড়লে দূর-দূরান্তের লোক-জনের উপস্থিতি কম ছিলো। নাশকতা ঠেকাতে শহরে ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিলো।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গাংনী শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে। পরে বাসস্ট্যান্ড শহীদ রেজাউল চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকরাম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম চেবি, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল হক, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন বাবলু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবুল বাশার, যুবলীগে নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর নবীর উদ্দীন, মটমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম, কাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ স্বপন, কাথুলী ইউপি আ.লীগ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগ নেতা রতন, সুমন, জনি প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর শহরে ও উথলী মোড়ে গত মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে একটি বাস, একটি ট্রাক এবং দুটি সিএনজি থ্রি হুইলার ভাঙচুর করেছে। জীবননগর শহরের টিঅ্যান্ডটিপাড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস ও উথলী মোড়ে চলন্ত ট্রাক ও সিএনজি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তদল পালিয়ে যায়। হরতাল সমর্থকরা এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল ধারণা করছে।

জীবননগর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার কাজি হাসানুজ্জামান বাবুল অভিযোগ করে বলেন, হরতালের কারণে তিনি তার বাসটি বাড়ির সামনে গ্যারেজ করে রাখেন। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদল তার বাসের সামনের ও পেছনের গ্লাস ভাঙচুর করে। শক্রতা করে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। একই রাতে উথলী মোড়ে ও আখ সেন্টারের নিকট দুর্বৃত্তদল একটি ট্রাক ও দুটি সিএনজি থ্রি হুইলার ভাঙচুর করে সটকে পড়ে।