সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ তোয়াক্কা করলেন না নির্বাহী প্রকৌশলী

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুর-চোখতোলা ১ কিলোমিটার সংস্কার কাজে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তার তোয়াক্কা করছেন না মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। গতকাল সোমবার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হলে তিনি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তবে জেলা প্রশাসক, সাংবাদিক ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্যবৃন্দ সরেজমিন সড়ক পরিদর্শনের প্রস্তাব দিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনায় এলাকাজুড়ে বইছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।

গত ৩ মে শুক্রবার সকাল থেকে ওই সড়কের এক কিলোমিটার সংস্কার কাজ শুরু হয়। তবে এসময় সাইডে দেখা যায়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কার্যাদেশ মতো সংস্কার হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন স্থানীয় লোকজন। এ বিষয় নিয়ে গত ৫ মে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংস্কারস্থল পরিদর্শন না করে উল্টো সংবাদটি সঠিক নয় বলে প্রচার করতে থাকেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচ্ছুজ্জামানসহ ওই অফিসের কয়েকজন। গতকাল সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি আবারো দাবি করেন কাজ ঠিকঠাক হয়েছে। বিষয়টির প্রতিবাদ করেন সাংবাদিক রফিকুল আলম। কমিটির সদস্য ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পরিদর্শনের দাবি করেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আনিচ্ছুজামান। জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেনও সরেজমিন পরিদর্শনের পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন।

এদিকে কাজ শুরুর পর থেকেই এলাকার মানুষ এবং ওই সড়কে চলাচলকারী অনেকেই সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সরজমিনে দেখা গেছে, নামকাওয়াস্তে সিলকোট দেয়া হয়েছে। সড়কের দুপাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। অনেক স্থানে যেভাবে উঁচু নিচু ছিলো তা ওই অবস্থাতেই রয়েছে। এরপরেও কাজ সঠিক হয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি এলাকাবাসীর মনে নানান সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে ঠিকাদার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও দরপত্র সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। ঠিকাদার বলেছেন, কোনো কাগজপত্র নেই। নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনা মতো কাজ করা হচ্ছে। কাজপত্র সরবরাহের এ লুকোচুরি মাছ দিয়ে শাক ঢাকার মতোই বলে মনে করছেন কয়েকজন ঠিকাদার।

জানা গেছে, ওই সড়ক সংস্কার কাজ করছেন রাজবাড়ীর মেসার্স আরজু রহমান নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার মূল বাজেটের ২৮ ভাগ ছাড়ে চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখে। দরপত্রে সাত মিলিমিটার সিলকোট, কার্পেটিং, সাববেজ-২সহ আরো কয়েকটি শ্রেণির কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধুমাত্র সিলকোটের কাজ করা হচ্ছে। ভাঙা কিংবা দেবে যাওয়া স্থানে সাববেজ-২ কিংবা কার্পোটিং করা হচ্ছে না। তাছাড়া বিটুমিন কম দেয়া, নিম্নমানের বালি ও মিক্সিং এ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদারের অভিযোগ, কিছুদিন আগে ওই সড়কের চোখতোলা মাঠ এলাকায় সংস্কার কাজ (কার্পোটিং) করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে বর্তমান ঠিকাদারের কার্পেটিং কাজ করতে হচ্ছে না। কার্পেটিংসহ অন্যান্য কাজ না করে যে অর্থ বাচানো হচ্ছে তা ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা ভাগ-বাটোয়ারার পাঁয়তারা করছেন।