সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনে হামলা ভাঙচুর আগুন : জীবননগরে দুজন গ্রেফতার

নির্বাচনের দাবির বিষয়ে সংলাপের উদ্যোগ সরকার না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : খালেদা জিয়া

 

স্টাফ রিপোর্টার: সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবির বিষয়ে সংলাপের উদ্যোগ সরকার না নেয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলশান কার্যালয়ের অবরুদ্ধ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সাংবাদিকদের এ কথা জানান। অবরোধ কতদিন চলবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আমরা বারবার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। তবুও আমরা অপেক্ষায় আছি- সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা আলোচনার উদ্যোগ নেবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।

এদিকে এক সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকাকালে সাবেক আমলা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন। এ সময়ের মধ্যে কোনো নেতা সেখানে যাননি। গতকাল সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সাথে প্রথমবারের মতো দেখা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে যান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজে মোহাম্মদ আলী। তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে চলমান আন্দোলনের সবশেষ পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কি আদৌ ফোন করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খোঁজ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, অমিত শাহর সাথে নেত্রীর কথা হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম মিয়া আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি নয়, বন্দি করে রাখা হয়েছে। যে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে সেই পুলিশই বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি নিরাপদ স্থান থেকে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করেছে। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে বর্তমানে সুস্থ আছেন বলেও জানান তিনি। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, এভাবে তিনবারের একজন প্রধানমন্ত্রী দেশে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেত্রী ম্যাডামকে বাসার বাইরে যেতে না দেয়া আইনসিদ্ধ নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। সভা-সমাবেশে আমরা যা কিছু বলেছি, তা বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, এর বাইরে কিছু নয়।

সারাদেশে চলমান অবরোধে শনিবার রাত থেকে রোববার সারাদিন ও সন্ধ্যারাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর আশপাশের অঞ্চল থেকে শুরু করে বহু দূরবর্তী অঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত বহুসংখ্যক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এএসপির গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় নাশকতা ঠেকাতে গ্রাম পুলিশদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে গ্রাম পুলিশদের সাথে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের এক যৌথ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম, হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলি শাহ মিন্টু, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, কুড়–লগাছি ইউপি চেয়ারম্যান সরফরাজ উদ্দিন, দামুড়হুদা সদর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুর হাশেম, দামুড়হুদা মডের থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই বাবলুর রহমান প্রমুখ। সভায় উপজেলায় কর্মরত সকল গ্রাম পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার আহ্বান জানানো হয় এবং হরতাল ও অবরোধে উপজেলার আওতাধীন রেলপথ, সড়কপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ কোথাও কেউ যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেই মোতাবেক উপস্থিত গ্রাম পুলিশদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ ফয়জুল ইসলাম।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার উথলীতে গাড়ি ভাঙচুর মামলার আসামি বিএনপি কর্মী উথলী গ্রামের মনিরুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত দু দিনে ছয়জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গতকাল রোববার ভোর ৪টার দিকে জীবননগর থানা পুলিশ উথলী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামের রিয়াজ উদ্দীনের ছেলে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। আটককৃত মনিরুলকে গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা সংশ্লিষ্ট আদালতে করা হয়েছে। এছাড়াও জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের বাঁকা পিকেটাররা একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস ভাঙচুর করে। পিকেটারদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে মিনিবাস ছায়াপথের সামনের গ্লাস ভেঙে যায় বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে উপজেলার উথলী ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রের সামনে ঢাকাগামী ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাতেই জীবননগর থানার এএসআই মাহমুদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন থানায়।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সমর্থনে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। রোববার রোববার সকালে শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান। মিছিল শেষে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের ওপর বসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয় নেতা-কর্মীরা। দলীয় নেতাকর্মীদের অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে সাবেক এমপি মসিউর রহমান বলেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে এবং আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এ সময় পুলিশ এলে সমাবেশকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিল ও সমাবেশে জেলা বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ইবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি বাসে হামলা করেছে অবরোধকারীরা। রোববার দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ শহরে ফেরার পথে ভাটইবাজার নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ হামলায় কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা আহত হননি বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান জানান, রোববার ২টার দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বহনকারী বাস (কুষ্টিয়া-স-১১-০০০৪) ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ শহরের উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি ভাটইবাজার নামক স্থানে এসে পৌঁছুলে অবরোধকারীরা বাসটি লক্ষ্য করে হামলা করে। এতে বাসের গ্লাস ভেঙে যায়। তবে কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা আহত হননি বলে তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস জানায়, রোববার কুষ্টিয়া শহর থেকে তিনটি ও ঝিনাইদহ শহর থেকে একটি শিক্ষক-কর্মকর্তা বহনকারী বাস ক্যাম্পাসে আসে। কুষ্টিয়ার গাড়িগুলো পুলিশ পাহারায় এলেও ঝিনাইদহ গাড়িতে কোনো পুলিশ পাহারা ছিলো না।

পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল আরোহী কিছু দূর্বৃত্ত বাসটি লক্ষ্য করে হামলা করে। এতে বাসের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ আহত হননি।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। পুলিশ পাহারায় কিছু বাস ও মাইক্রোবাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তি ও শিক্ষক-কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছেন। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।