সড়ক দুর্ঘটনায় ইজতেমাগামী তিন হাজীসহ ১০ জন নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ জন। ঢাকার ধামরাইয়ের জয়পুরা বাসস্ট্যান্ডে ইজতেমাগামী একটি প্রাইভেট কারকে একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলে ৩ জন হাজী নিহত হন। পরে আহত অবস্থায় প্রাইভেট কার চালককে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের বাড়ি যশোর কোতয়ালি থানা এলাকায়। অন্যদিকে রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, যশোরের বকচর হুশতলা এলাকার মোটর পার্টস ব্যবসায়ী হাজি নাজিম উদ্দিন (৩৫), হাফেজ মোহাম্মদ রইস উদ্দিন (৩২), হাজী নাসির উদ্দিন ও আব্দুর রহিম (৩৫) ইজতেমায় জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে প্রাইভেটকারযোগে টঙ্গীর উদ্দেশে রওনা দেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ধামরাইয়ের জয়পুরা বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-আরিচা রুটের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনার পর পর বাসের পিছন দিক থেকে একটি মাটিবাহী ট্রাক সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেট কারটির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে মিনিবাসের নিচে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলে নাজিম, রইস ও নাসির নিহত হন। আহত অবস্থায় প্রাইভেট কার চালক রেজোয়ান (২৭) ও রহিমকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিত্সকরা রেজোয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পুলিশ বাস ও মাটিবাহী ট্রাকটি আটক করে। দুই গাড়ির চালক পালিয়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায় বাসের ৩ জন যাত্রীও আহত হন।

তিন হাজি নিহতের ঘটনায় যশোরের বকচর হুশতলা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত হাজী নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা খাতুন স্বামী হারিয়ে শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। নিহত হাজী নাজিমের ভাই কবিরুল ইসলাম বলেন, তারা ইজতেমায় জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে টঙ্গীর উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে খবর পান যে তারা মারা গেছেন।

রাজধানীতে নিহত ৬: গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লিটন ও বিল্লাল নামে দুই জন শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনের সড়কে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিকশা দু’টিকে ধাক্কা দিলে দুই চালকসহ আরোহী তাহের উদ্দিন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত লিটনের বয়স ৩০ ও বিল্লালের বয়স ২৮। ৬০ বছর বয়সী তাহের উদ্দিন একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় আরও একজনের আহত হওয়ার কথা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেও তিনি কোথায় চিকিত্সা নিয়েছেন তা জানা যায়নি। দুর্ঘটনায় দায়ী বাসটি আটক করেছে পুলিশ। তবে চালক পালিয়ে গেছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উত্তরার হলি ল্যাব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সামনে পিকআপ ভ্যানের চাপায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী ঐ নারীর পরিচয় জানা যায়নি। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। অন্যদিকে শেরেবাংলা নগরে গণভবনের সামনে মিরপুর রোডে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মিলন (২৫) নামে এক যুবক নিহত হন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি মোহাম্মদপুরে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। এছাড়া, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাঁটাবনে ট্রাক চাপায় ইডেন মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রিমা আক্তার (২১) নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রাবাড়ীতে রিমা এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠান শেষে আরেক বন্ধু ইমনের মোটরসাইকেলে করে তিনি কলাবাগানের লেক সার্কাসের ৪৯/বি নম্বর বাড়িতে ফিরছিলেন। মোটরসাইকেলটি কাঁটাবন মসজিদের সামনে পৌঁছালে পিছন থেকে একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। তারা রাস্তায় ছিটকে পড়ার পর ঘটনাস্থলেই রিমার মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় ইমনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।