স্মার্টকার্ড বিতরণে কালক্ষেপণে বিশ্বব্যাংকের অসন্তোষ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বেশ কয়েকবার বিতরণের সময় নির্ধারণ করেও বহুল কাঙ্ক্ষিত উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) নাগরিকদের হাতে তুলে দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নেয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। নানা দেনদরবারের পর প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়ানো হলেও এই বর্ধিত সময়ে প্রায় ১০ কোটি ভোটারের হাতে এটি পৌঁছে দেয়া যাবে কি-না, এ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনো স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরুই হয়নি। যদি দেয়াও শুরু হয় তার পরও সবার হাতে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। অথচ আগামী বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্পটির বর্ধিত সময় শেষ হয়ে যাবে।

শুরু থেকে এ প্রকল্পে সমন্বয়হীনতার কারণে সবার হাতে স্মার্টকার্ড কবে পৌঁছাবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতো সংশয় রয়েছে দাতা সংস্থারও। কার্ড প্রস্তুতের পরও বিতরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অহেতুক সময়ক্ষেপণে অসন্তোষও বিরাজ করছে তাদের মাঝে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা বৈঠকে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস- আইডিইএ নামের এই প্রকল্পটির বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ইসি সচিবালয় ও আইডিইএ প্রকল্পের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি নিয়ে সংশয় কিংবা হতাশা প্রকাশ করার কিছু নেই। বর্ধিত সময়ের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি স্মার্টকার্ড উৎপাদন হয়ে গেছে। আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) যে কোনো দিন এটি বিতরণ শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে এটির বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে চায় ইসি। এখন তার সময় বরাদ্দের জন্যই অপেক্ষা।

আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। এ জন্য উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০১৪ সালের আগস্টেই। কিন্তু কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি না হওয়ার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০১৫ সালে ১৪ জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসি। সেই চুক্তি অনুযায়ী, স্মার্টকার্ড উৎপাদনের জন্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১০টি মেশিন বসানো শুরু হয় এনআইডি উইংয়ে। এর পরেই এনআইডি চিপে তথ্য পার্সোনালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ডিসেম্বরে স্মার্টকার্ড উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের সংশয় ও অসন্তোষের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির কার্যকারিতা বাড়াতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। ইআরডির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ খালেদ-উর-রহমান ইসি সচিবকে লেখা চিঠিতে জানান, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম জনগণের কাছে এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ত্রুটিগত কারণে চার মাস কার্ড উৎপাদন বন্ধ ছিল এবং এ কারণে কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করা নিয়ে এরই মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সে জন্য প্রকল্পটির কার্যকারিতা বাড়ানো প্রয়োজন। তাদের তাগাদার প্রেক্ষিতে ইসি সচিবালয় এনআইডি উইং মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে কার্ড উৎপাদন ও বিতরণে গতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) উন্নতমানের স্মার্টকার্ড বিতরণের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই কার্ড ভোটারদের হাতে তুলে দেয়া হবে। এ জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মার্টকার্ড উদ্বোধনী মঞ্চে রাখার পরিকল্পনা করেছেন ইসির নীতি-নির্ধারকরা। প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকা শহরের অর্ধকোটি ভোটার পাবে নতুন কার্ড।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন বলেন, কার্ড বিতরণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের যে কোনো দিন এই কার্ড উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। ইতিমধ্যে কমিশন ঢাকার ভোটারদের প্রথমে স্মার্টকার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব ভোটারের হাতে এই কার্ড তুলে দেয়া হবে।