স্বীকৃতি পেলো তৃতীয় লিঙ্গ

স্টাফ রিপোর্টার: হিজড়াদের লিঙ্গ পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলো সরকার। এর ফলে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে তাদের লিঙ্গ পরিচয় হিজড়া হিসেবে উল্লেখ করা হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ঘুচাতেও কার্যকর হবে এ স্বীকৃতি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সরকারি সুবিধাও তাদের কাছে পৌঁছে না। এ কারণেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় তুলেছে বলে জানিয়েছেন সচিব। এ সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে হিজড়া। নথিপত্রে ইংরেজিতেও হিজড়া শব্দটি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন। হিজড়ারা ক্রোমোজমের ত্রুটির কারণে জন্মগতভাবে যৌন প্রতিবন্ধী, যাদের জন্ম-পরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়। উইকিপিডিয়া হিজড়া শব্দটির অপর অর্থ হিসেবে ট্রান্সজেন্ডার লিখে থাকে। ট্রান্সজেন্ডার বলতে এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থাকে বোঝায়, যা দৈহিক বা জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোনো শ্রেণিতেই পড়ে না। হিজড়াদের বৈশিষ্ট্যগতভাবে দুটি ধরন রয়েছে নারী ও পুরুষ। নারী হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকলেও স্ত্রীজননাঙ্গ না থাকায় তার শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। পুরুষ হিজড়াদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে হিজড়ারা নারী বা পুরুষ যা-ই হোক, নিজেদের নারী হিসেবেই এরা বিবেচনা করে থাকে। বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার বলে ধারণা করা হয়। একসময় সামাজিক বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ ছিলো। বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে তা হারিয়ে গেছে। হিজড়াদের মধ্যে স্থানভেদে বেশ কয়েকজন গুরু থাকে। বয়স এবং মানভেদে তাদের নানগুরু, দাদগুরু ও গুরুমা বলে সম্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র সব জায়গাতেই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণে অনেকেই অন্য হিজড়াদের সাথে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলো। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান সরকার আগেই তাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে।