স্টেশন থেকে ধরে মসজিদের সামনে গণধোলাই : চুল ঢেরা কেটে গলায় জুতোর মালা

দামুড়হুদা জয়রামপুর গাতিরপাড়া মসজিদের মাম মতি হুজুর অবশেষে গ্রামবাসর হাতে পাকড়াও

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার জয়রামপুর গাতিরপাড়ার জামে মসজিদের ইমাম মতি অবশেষে গ্রামবাসীর হাতে পাকড়া হয়ে পিটুনির পাশাপাশি জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছে, বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে থাকার পর গতকাল বুধবার দুপুরে খুলনার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হলে তাকে দর্শনা রেলস্টেশন থেকে এলাকাবাসী ধরে জয়রামপুর গাতিরপাড়া মসজিদের সামনে হাজির করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে গণধোলাই দেয়। মাথার চুল ঢেরা কেটে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ জনরোষ থেকে বাঁচাতে মতি হুজুরকে উদ্ধার করে থানায় নেয়।

স্থানীয়রা বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার মৃত মফিজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে মতি ৩ সন্তানের জনক। তিনি গাতিরপাড়া জামে সমজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। মসজিদের পাশের বাড়ির গৃহবধূর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তুলে দেহভোগ করে আসছিলো বলে অভিযোগ ওঠে। জনৈক এক গৃহবধূর স্বামী বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মোবাইলফোন অটোরেকর্ড চালু করে রাখে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ওই মোবাইলে অটোরেকর্ডে ধরা পড়ে মতি হুজুর ও ওই গৃহবধুর কথাপোকথন। মোবাইলে রেকর্ড শোনার পরপরই জনৈক গৃহবধূর স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ইমাম মতি হুজুরকে খুঁজতে শুরু করে।

রেকর্ডে মতি হুজুর ও গৃহবধূর মধ্যে যে সমস্ত বাজে ভাষায় আলাপচারিতা হয় তা পত্রিকায় লেখা সম্ভব নয়। মতি হুজুরকে না পেয়ে জনৈক গৃহবধূর স্বামী তার শ্বশুরকে ডেকে নিয়ে মেয়ের কির্ত্তি-কাহিনী শোনায়। মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন। স্থানীয়রা আরো জানান, মোবাইলে যে সমস্ত কথাপোকথন হয়েছে তা শুনলে যেকোনো মানুষের রক্ত গরম হয়ে উঠবে। মতি হুজুর মাঝে মধেই ভোর রাতে মসজিদে এসে ওই গৃহবধূর সাথে দৈহিক মেলামেশা করার পর নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়িয়েছে বলেও অভিযোগ। বিষয়টি মহল্লায় জানাজানি হয়ে পড়লে মতি হুজুর গা ঢাকা দেয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত মতি হুজুর আত্মগোপনে ছিলো। ইতোমধ্যে উত্তেজিত গ্রামবাসী মতি হুজুরকে কয়েক দফা তার নিজ বাড়ি ঠাকুরপাড়ায় খোঁজ করে না পেয়ে ফিরে আসে। মতি হুজুর গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ট্রেনযোগে খুলনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় গোপন সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী তাকে দর্শনা হল্টস্টেশন থেকে ধরে নিয়ে আসে এবং মসজিদের সামনে হাজির করা হলে উত্তেজিত জনতা তাকে গণধোলাই দেয় এবং মাথার চুল ঢেরা কেটে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে গাতিরপাড়া মসজিদ কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন চকলা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ অপরাধের কারণে মহল্লাবাসী তার ওপর খুবই ক্ষিপ্ত ছিলো। তাকে ওই সময় হাতে পেলে পিটিয়েই মেরে ফেলতো। ওই সময় মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হলেও মতি হুজুর হাজির না হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। মহল্লাবাসীর চাপে তাকে ইমামতির পদ থেকে বাতিল করা হয় এবং মসজিদে পরিচালিত পাঠাগারের শিক্ষকের পদ থেকেও তাকে বাতিল করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। গতকাল তাকে যখন এলাকাবাসী দর্শনা থেকে ধরে নিয়ে আসে তখন আমি এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বাদ আছর সালিস বৈঠকের আহ্বান করি। কিন্তু উত্তেজিত গ্রামবাসী সে পর্যন্ত অপক্ষো না করে সালিস বেঠক হওয়ার আগেই তাকে গণধোলাই দেয় এবং চুল কেটে ঢেরা দিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে দেয়।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান জানান, ঘটনাটি জানার সাথে সাথে তাকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এসআই আফজাল হোসেন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে মতি থানা হাজতে আছে। এ সংক্রান্তে গাতিরপাড়া মসজিদ কমিটির সভাপতি জসীম উদ্দিন চকলা বাদী হয়ে মতি হুজুরের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।