সোলায়মান হক ছেলুন ও আলী আজগার টগরের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ : স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আয়ুব আলী

ভোটার তালিকার সিডির দাম চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জন্য ১৯ হাজার ও চুয়াডাঙ্গা -২ আসনের জন্য ১৬ হাজার ৫ টাকা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও হাজি আলী আজগার টগরের পক্ষে জেলা রিটার্নি অফিসারের নিকট থেকে মনোয়নফরম ও ভোটার তালিকার সিডি নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আয়ুব হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় আসন্ন ১০ম সংসদ নির্বাচনে ১৫২ প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার জন্য চিঠি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব চিঠিতে স্বাক্ষর করতে শুরু করেছেন বলে দলীয়সূত্র জানিয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার বর্তমান দুজন সংসদ সদস্যের পক্ষে  মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বচানের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসাইনের নিকট থেকে প্রতিনিধির মাধ্যমে এ মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়।  জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ (সদর ও আলমডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন সহোদর চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। এ সময় সাথে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল ও পিএস শাহরিয়ার হোসেন রিপন।

অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর এবং চুয়াডাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন) আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজি আলী আজগার টগরের পক্ষে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক আরিফ ও ফারুক আহমেদ। সাথে ছিলেন আলী আজগার টগর এমপির এক ভাইও।

মনোনয়নয়পত্র উত্তোলনের সময় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জন্য ১৯ হাজার টাকা দামে ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জন্য ১৬ হাজার ৫০০ টাকা দামে ভোটার তালিকার সিডি ক্রয় করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নির্বাচনের কারণে ছুটির দিনেও অফিস খোলা থাকবে। মনোনয়নপত্র জমা দানের সময় ২০ হাজার টাকার জামানত জমা দিতে হবে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আয়ুব হোসেন নিজেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী দাবি করে গণসংযোগ করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আয়ুব হোসেন জামজামি ইউনিয়ন পরিষদের দু বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগে রয়েছে তার ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগমহলের বাইরেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। একজন সরল সোজা ও যোগ্য নেতা হিসেবে সকলের নিকট জনপ্রিয়। গতকাল তিনি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার অনুসারীরা ইতোমধ্যেই গণসংযোগ শুরু করেছেন শহরসহ বিভিন্ন এলাকায়।

ঢাকা অফিস জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের দলীয়সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি এবং জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড প্রাথমিকভাবে দেড় শতাধিক এমপিকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এক বছর আগেই দলের সিনিয়র নেতাদের এ কথা জানান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় প্রায় ১২০ জনের একটি তালিকাও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু গণভবন সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ক্রমেই তার মনোভাব পরিবর্তন করছেন। তিনি বর্তমান এমপিদের বাদ দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসছেন। বাদ দেয়া হলেও তা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আশঙ্কার কারণেই দলের সভানেত্রী তার মনোভাব পরিবর্তন করতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা ধারণা করছেন। সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বর্তমান এমপিদের অগ্রাধিকারের মাপকাঠি। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের ধারণা একজন এমপি স্থানীয়ভাবে বিএনপি-জামায়াতের যেকোনো নাশকতা বা আন্দোলন ঠেকানোর জন্য যতোটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবেন, অন্য নেতাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। শুধু এ বিবেচনায় অনেক অজনপ্রিয় ও বিতর্কিত এমপি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। প্রার্থী বাছাই কার্যক্রমে যুক্ত এক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নির্ভর করছে মূলত দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন, সেই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। এ বিবেচনা থেকেই প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে তার হাতে দেয়া হয়েছে। ১০ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রায় তিন হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। গত কয়েক দিন এসব আবেদনপত্রের খুঁটিনাটি দেখা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাও গণভবনে মতবিনিময় করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে।