সুপ্রিমকোর্টে ফের ঢিল ছোড়াছুড়ি : সব আদালতে আজ কর্মবিরতি

স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল সোমবারও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের সাথে যুব মহিলা লীগের কর্মীদের ঢিল ছোঁড়াছুড়ি হয়েছে। তবে এতে কেউই আহত হয়নি। এদিকে আগের দিন সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে ঢুকে আইনজীবীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টসহ সারা দেশের প্রতিটি আদালতে কর্মবিরতি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমিতি আগের দিনের হামলার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির নির্লিপ্ততার নিন্দা জানিয়েছে এবং দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতারা একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে সুপ্রিমকোর্টের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে ঢুকে সরকার সমর্থকদের এ ধরনের হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
ঢিল ছোঁড়াছুড়ি ও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত রোববার সরকার সমর্থকদের হামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে স্লোগান দিতে দিতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে হাজির হন। মূল ফটকটি আগে থেকে বন্ধ করে রাখা ছিলো। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ফটকের ভেতরে থেকে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় মৎস্য ভবন সংলগ্ন সড়ক হয়ে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি মিছিল সুপ্রিমকোর্ট অতিক্রম করছিলো। মিছিল থেকে আইনজীবীদের লক্ষ্য করে যুব মহিলা লীগের কর্মীরা জুতা উঁচিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে বলতে থাকেন, খালেদা জিয়ার দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। এ সময় আইনজীবীদের মধ্য থেকে একজন যুব মহিলা লীগের কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়েন। যুব মহিলা লীগের কর্মীরা তখন প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে জুতা ছোঁড়েন। এরপর উভয় পক্ষ থেকেই ইট-পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়। এ পরিস্থিতি চলতে থাকে প্রায় ১০ মিনিটের মতো। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের ৫০ থেকে ৬০ জন নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দেন। এর আগেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা সুপ্রিমকোর্টের মূল ফটক ছেড়ে আইনজীবী সমিতি ভবনে ফিরে যান। তখনও ফাঁকা মাঠে যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন। একপর্যায়ে সরকার সমর্থকরা এর আগের দিনের মতো সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় যুব মহিলা লীগ ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা প্রধান ফটকের বাইরে মিছিল-স্লোগান দিতে থাকে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিমকোর্টের ভেতর থেকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাড. আবদুল বাসেত মজুমদারের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটকে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে কিছু সময় মিছিল-সমাবেশ করার পর মিছিলটি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এই সমাবেশে আবদুল বাসেত মজুমদার ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লায়েকুজ্জামান মোল্লা, সাবেক সম্পাদক শম রেজাউল করিম, বশির আহমেদ, রবিউল আলম বুদু, আজাহার আলী ভুঁইয়া প্রমুখ। সমাবেশে বাসেত মজুমদার বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। সর্বোচ্চ আদালত পবিত্র স্থান। এই পবিত্র স্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। সম্প্রতি এখানকার কতিপয় আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টকে তাদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে রোববার যেভাবে আমাদের সুপ্রিমকোর্টকে ব্যবহার করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এরা রাজনৈতিক উদ্দেশে বাইরের লোকজনকে সুপ্রিমকোর্টে নিয়ে এসেছে। এমন লোকজনকে নিয়ে এসেছে, সুপ্রিমকোর্টে যাদের কোনো কাজ নেই।

বাসেত মজুমদার আরও বলেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একটি জেলার নাম বদলে দিবেন বলেছেন। আসলে তিনি একটি জেলা নয়, বাংলাদেশকেই বদলে দিতে চান। উনি জানেন না, ওই জেলা কত পবিত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বলব, আপনারা এই আদালতের আইনজীবী। এ আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করবেন। এ আদালতকে জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হতে দিবেন না।

 

প্রধান বিচারপতির নির্লিপ্ততায় নিন্দা ও কর্মবিরতির কর্মসূচি : বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির নির্লিপ্ততায় নিন্দা জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। গতকাল সোমবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজে মোহাম্মদ আলী। এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, মার্চ ফর ডেমোক্রেসির অংশ হিসেবে রোববার সকাল থেকে আইনজীবীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে থাকে। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে রাস্তায় আইনজীবীদের মিছিল করতে বাধা দেয় এবং ফটক আটকে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করার পর এক পর্যায়ে শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে আইনজীবীদের ওপর চড়াও হলে পুলিশ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করে এবং গেট খুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা আইনজীবীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। এতে সিমকি ইমামসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আইনজীবীদের ধাওয়া করে। হতবিহ্বল আইনজীবীরা সমিতি ভবনে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা হয়। এক আইনজীবীর মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সুপ্রিমকোর্টে আগত অনেক বিচার প্রত্যাশীর ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়। অ্যাড. আবদুল কাইয়ুম ভূঁইয়া এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।