সালিসে উত্তেজিতরা দলেচটকে হত্যা করেছে এক কৃষককে : মাতবরদের খুঁজছে পুলিশ

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নাগদাহে জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সালিস ডেকে উগ্র আচরণ

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সদরুল নিপুল: আলমডাঙ্গা নাগদাহ উত্তরপাড়ার কৃষক শহিদকে (৫৩) দলেচটকে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আয়োজিত সালিস ভেস্তে গেলে উত্তেজিতরা ছুটে গিয়ে তাকে তার বাড়ির উঠোনেই নৃশংসভাবে হত্যা করে। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে এ নৃশংস এ ঘটনা ঘটে।

সালিসসভার মাতবর মোজাম্মেল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ গতরাতেই অভিযান চালিয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেমন কাউকে গ্রেফতারের তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। দলেচটকে পিটিয়ে হত্যার পর নাগদাহ গ্রামে উত্তেজনা ছড়ালেও অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সালিসে পক্ষপাতেরও অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের নাগদহ উত্তরপাড়ার আপিল মণ্ডল কয়েক বছর আগে তার বাড়ি সংলগ্ন ৪ শতক জমি বিক্রি করেন। জমি কেনেন প্রতিবেশী আরশেদ আলীর ছেলে দুধব্যবসায়ী ছোট। জমির টাকা দেয়ার পর সেই জমিতে গোডাউন নির্মাণ করে ব্যবসাও শুরু করেন ক্রেতা। জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। কেনা জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললে বিক্রেতা আপিল মণ্ডলের দু ছেলে সাদ আলী ও হোসেন আলী আরো দু লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গতরাত ৮টার দিকে উত্তরপাড়া মোড়েই সালিসের আয়োজন করা হয়। উভয়পক্ষের লোকজন সালিসে উপস্থিতও হন। জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললে বিক্রেতার দু ছেলে আরো টাকা দাবি করলে উত্তেজনা দানা বাধে। এক পর্যায়ে টাকা দাবি করা দু সহোদর সাদ ও হোসেন আলী সালিস থেকে উঠে টান পায়ে বাড়ির দিকে ছোটেন। এ সময় সালিসসভার অনেকেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা পিছু নেন। দু সহোদর সাদ ও হোসেনকে না পেলেও সামনে পড়ে তাদের চাচাতো ভাই শহিদ। তিনি তার বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়েই বলেন, ওই ঝামেলায় আমরা নেই। আমাদের জড়িও না। কে শোনে কার কথা। উত্তেজিতরা শহিদকেই মারধর শুরু করে। ফেলে দিয়ে পা দিয়ে চটকাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান শহিদ। তিনি মৃত আফতাব মণ্ডলের ছেলে। স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, শহিদ মারা গেলে হামলাকারীরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।

হত্যার খবর পেয়ে গতরাতেই আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ও ঘোলদাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই লিয়াকত আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় নিহত শহিদের ভাতিজা সাইদুর রহমান ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্তদের নামের তালিকা তুলে দেন পুলিশের হাতে। তিনি বলেন, সালিসভায় নেতৃত্বে ছিলেন মহল্লার মাতবর মোজাম্মেল, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ছোট বুড়ো, টেংরা, আসাদ, মধু, দুদু, আতিয়ার, রসুল, খাইরুল, নজরা, জহুরুলসহ তাদের লোকজন। এরাই সালিসভা থেকে উঠে এসে আমার চাচা শহিদের বাড়ির উঠোনে পরিবারের সদস্যদের সামনেই দলেচটকে হত্যা করেছে। পুলিশ অভিযোগ শুনে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করে। এ সময় কে একজন বলে ওঠেন, আসামিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দাও। এ কথা শুনে অপর একজন বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা প্রভাবশালী। ওদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়।

শহিদ ক্ষুদ্র কৃষক। তার রয়েছে তিন মেয়ে। বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। স্ত্রীসহ কন্যাদের আহাজারিতে মহল্লার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পুলিশ গতরাতেই লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়ার প্রক্রিয়া করে। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। দুপুরে লাশ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হতে পারে। জমি ক্রেতা ছোটকেও পুলিশ খুঁজতে শুরু করেছে। তাকে গতরাতে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পুলিশ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, হত্যাকারীরা যতো প্রভাবশালীই হোক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।