সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নির্বাচনে না যাওয়ার খেসারত দিতে হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াতের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে খালেদা জিয়া নির্বাচন করেননি। তিনি নির্বাচন বর্জন করে জ্বালাও পোড়াও করেছেন। নির্বাচন বর্জনের খেসারত তাকে দিতে হবে। গতকাল সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন তিনি। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সাতক্ষীরার মাটিকে রক্তাক্ত করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সাতক্ষীরায় একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। তারা এ দেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলো। জামায়াত-শিবিরের কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এসে তারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের দোসর হয়ে কাজ করছে। বিএনপি নেত্রী ওই যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। তার সে ঘোষণা  জনগণ প্রত্যাখ্যান করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা হরতাল- অবরোধের নামে রাস্তা কেটে, গাছ কেটে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই। এদেশে তাদের বিচার হবেই হবে। তিনি বলেন- বিএনপি নেত্রীর দু গুণ- দুর্নীতি আর মানুষ খুন।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, উনি শয়নে-স্বপনে এখনও পেয়ারে পাকিস্তান দেখেন। সে জন্য যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তার এতো মায়া কান্না। এতো দরদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনা করতে বহু চেষ্টা করেছিলাম। ফোন করতে গিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাতক্ষীরা তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী আফম রুহুল হক, সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার, জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনছুর আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সহিংসতায় নিহত ও আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি নিহত পরিবারের সদস্যকে ৫ লাখ টাকা, আহতদের ২ লাখ টাকা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১৫৩ পরিবারের মধ্যে তিনি এ সাহায্য দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বেলা সাড়ে তিনটায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, আশাশুনি এতিম ছেলেমেয়েদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, কপোতাক্ষ নদের পুনঃখনন, তালা উপজেলার পাখিমারা বিলের টিআরএম প্রকল্পের উদ্বোধন, খুলনা-সাতক্ষীরার সড়কের নির্মাণকাজ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, খারহাট কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার, তুলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের নির্মাণকাজের উদ্বোধন, শ্রীরামপুর ইউনাইটেড মডেল কলেজ একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন, নাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার, মানিক খালি সেতু, আশাশুনি- পাইকগাছা সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প ও সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *