সহিংসতায় নিহত ৩

স্টাফ রিপোর্টার: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনের (দোহার-নবাবগঞ্জ) পরাজিত প্রার্থী অ্যাড. আবদুল মান্নান খানের সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও কুপিয়ে পিতা-ছেলেসহ তিনজনকে খুন করেছে। কুপিয়ে আহত করেছে অন্তত ২০ জনকে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আহতদের রাজধানী ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- মোকছেদ খন্দকার ওরফে মুসা খন্দকার (৬৫), তার ছেলে মাসুদ খন্দকার (২৬) ও দোহার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন (৩২)। গতকাল সোমবার সকালে দোহার উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাজারবিঘা গ্রামসহ গোটা দোহারবাসী। ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিজিবি, ৱ্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তাদের নাম- আলী খন্দকার (৫০), আনোয়ার চোকদার (৩১), খোকন হোসেন (২২) ও তোতা মিয়া (৩৫)। পুলিশ আলী খন্দকারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র কুড়াল, ছুরি, চাপাতি, হকিস্টিক ও দা সহ বিভিন্ন প্রকার ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এদিকে হামলা ও নিহতের ঘটনায় আবদুল মান্নান খানকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে দোহার উপজেলায় মিছিল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, চোর ও দুর্নীতিবাজ আবদুল মান্নান খানের বিপক্ষে গিয়ে নেতাকর্মীরা সালমা ইসলামের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করে বিজয়ী করায় পাগল হয়ে উঠেছেন তিনি (মান্নান)। তাই নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের মূল ইন্ধনদাতা আবদুল মান্নানের কারণেই আওয়ামী লীগ ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। তাকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ইমেজ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, এটা পরিষ্কার যে, হুকুম আলী চোকদার গ্রুপের লোকজন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিলাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লার সমর্থকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। দোহার থানার ওসি কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির বিজয়ী প্রার্থী সালমা ইসলামের পক্ষে কাজ করেন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিলাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা ও তার সমর্থকরা। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. আবদুল মান্নান খানের পক্ষে কাজ করেন বিলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুকুম আলী চোকদার। এলাকাবাসী মান্নান খানকে ৫ বছরের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন মান্নান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তার পক্ষে কাজ না করে এবং ভোট না দিয়ে সালমা ইসলামের পক্ষে কাজ করায় তিনি উন্মাদ হয়ে গেছেন। সূত্র জানিয়েছে, পরাজিত হয়ে রোববার রাতেই মান্নান তার বিপক্ষের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে শায়েস্তা করার জন্য গোপন বৈঠকও করেছেন পক্ষের লোকজনের সাথে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মান্নানের সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সোমবার সকালে হামলা, ভাঙচুর ও নির্মমভাবে কুপিয়ে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, মান্নান খান দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতন চালিয়েছেন ৫ বছর। তিনি দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন। অনিয়ম-দুর্নীতিতে শীর্ষে গেছেন তিনি। আমরা দলে থেকেও তার মতো দুর্নীতিবাজেরই বিরুদ্ধে লড়েছি। সালমা ইসলামের পক্ষে কাজ করে তাকে বিজয়ী করেছি। পরাজিত হয়ে মান্নান খান রোববার রাতে গোপন মিটিঙে এ ধরনের হামলা, ভাঙচুর ও খুনের ঘটনার পরিকল্পনা করেছেন।