সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ন্ত্রণমূলক: টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় ‘কিছু ইতিবাচক’ দিকথাকলেও সার্বিকভাবে তা গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা বলেমনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।এ নীতিমালা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টিআইবির অবস্থান তুলেধরতে গিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানাকামাল এ কথা বলেন।তিনি বলেন, এ নীতিমালা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্নহওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এভাবে গণমাধ্যম চলতে পারে না। এ নীতিমালায়গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হয়েছে।এরমাধ্যমে সম্প্রচার গণমাধ্যমকে ঝুঁকিরমধ্যে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করেসাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, এ নীতিমালা তথ্য অধিকার আইন, সংবিধান, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূলবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গত ৪আগস্ট মন্ত্রিসভা এই নীতিমালা অনুমোদন করার পর থেকেই বিএনপি ও সাংবাদিকদেরএকটি অংশ এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেসমাবেশেরও কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। অবশ্য সরকার বলেছে, ‘কণ্ঠরোধের’ জন্য নয়, এটি করা হয়েছে গণমাধ্যমের ‘কল্যাণের’ জন্য।

সশস্ত্রবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় অথবা সাম্প্রদায়িকবিদ্বেষ ছড়ায়- এমন বিষয় প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য গত৮ আগস্ট এই নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করে তথ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মানুযায়ী ওইদিন থেকেই নীতিমালাটি কার্যকর হয়েছে।

সুলতানা কামাল বলেন, তথ্যঅধিকার আইনে বিশেষ বাহিনীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানার সুযোগ রাখা হয়নি। আর এনীতিমালায় জুড়ে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এর মাধ্যমে আইনের ঊর্ধ্বে রেখেবিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হবে। তখন তারা দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অপরাধেজড়িয়ে পড়বে।টিআইবি প্রধানের ভাষায়, দেশে যে সরকারই আসে, তারা ‘দেশ, সরকার ও রাষ্ট্রকে’ একসাথে গুলিয়ে ফেলে।তারা মনে করেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা।সম্প্রচারমাধ্যমে দেশবিরোধীকোনো কথা বলা যাবে না- এমন একটি ধারা তুলে ধরেসুলতানা কামাল বলেন, অবশ্যই আমরা দেশের বিরদ্ধে কথা বলবো না। তবে সরকারেরকারো বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। এ জন্যই আমরাউদ্বিগ্ন- কাউকে অলিখিত বিচারের ঊর্ধ্বে রাখার সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

টিআইবিরপরিচালক (আউটরিচ ও যোগাযোগ) রিজওয়ান-উল- আলম সংস্থার অবস্থান তুলে ধরেগণমাধ্যম নীতিমালা নিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।নীতিমালার ১৩টি লক্ষ্য ও চারটি কৌশলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীতিমালায় নেইউল্লেখ করে বেশ কয়েকটি বিষয় আলাদা করে তুলে ধরা হয় এ সময়।নীতিমালার৫.১.১ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় আদর্শ বা উদ্দেশের প্রতি কোনো প্রকার ব্যঙ্গবা বিদ্রূপ, বাংলাদেশের জনগণের অবমাননা অথবা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেবাংলাদেশের অখণ্ডতা বা সংহতি ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচারপরিহার করতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রচারিত অনুষ্ঠানে জাতীয় আদর্শ ওউদ্দেশ্য অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হবে তাস্পষ্ট নয়’ বলে মনে করছে টিআইবি।

নীতিমালার ৫.১.৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বা মর্যাদাহানীকর তথ্য প্রচার করা যাবেনা। এ ক্ষেত্রে কোন তথ্যটি ‘মর্যাদা হানিকর’ তা কীভাবে নির্ধারিত হবে- সেপ্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।নীতিমালার ৫.১.৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনোঅনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপনে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনসংস্থা এবং অপরাধ রোধ, অনুসন্ধান, ও তদন্ত এবং অপরাধীকে দণ্ড প্রদানেরদায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রতি কটাক্ষ বা বিদ্রুপ কিংবা তাদের পেশাগতভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে পারে- এমন কোনো দৃশ্য প্রদর্শন বা বক্তব্য প্রচারকরা যাবে না।টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রচলিত অর্থে এখন পর্যন্তকোনো গণমাধ্যম সশস্ত্র বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো সংস্থারপ্রতি কটাক্ষ বা বিদ্রুপ করে কোনো সংবাদ বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলেজানা যায় না। সেক্ষেত্রে এ ধারা সংযোজন গণমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষনিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি করবে।

৫.১.৭ ধারায়  বলা হয়েছে, কোনো বিদেশিরাষ্ট্রের অনুকূলে এমন ধরণের প্রচারণা যা বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যেবিরোধের কোনো একটি বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে অথবা একটি বন্ধুভাবাপন্নবিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন ধরণের প্রচারণা, যার ফলে সেই রাষ্ট্র ওবাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে এমনদৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না; টিআইবির মতে, এখানে ‘অনুকূলে’ ও ‘বিরুদ্ধে’ শব্দ দুটি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়াবিদেশি বা বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সব আচরণ সমালোচনার ঊর্ধ্বে- এমন ভাবারকোনো যুক্তি নেই।

সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশও টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।এতেবলা হয়, সম্প্রচার সংক্রান্ত আইন বিধি প্রণয়ণের আগে সবার পরামর্শ নিতে হবেযাতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের জন্য যেসার্চ কমিটি করা হবে তা হতে হবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত।সম্প্রচারমাধ্যমের লাইসেন্সিং ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এবং সম্প্রচারনীতিমালা থেকে আলাদা করে বিস্তারিতভাবে পৃথক বিজ্ঞাপন নীতিমালা করারওসুপারিশ করেছে টিআইবি।অন্যদের মধ্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালকইফতেখারুজ্জামান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মীর আহসান হাবিব সংবাদসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।