সমুদ্রসীমা নির্ধারণী রায়ের কপি ঢাকায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতেরসাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলার রায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার বেলা ২টায় (নেদারল্যান্ডসের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়) এই রায়ের কপি বাংলাদেশ ও ভারতেরকাছে হস্তান্তর করে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিস আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন)। বাংলাদেশ রায়টি গভীরভাবে পর্যালোচনাকরছে বলে জানা গেছে। আজ রায় প্রকাশ করে বিষয়টি সম্পর্কে সরকারেরপ্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীসোমবার রায় হাতে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা রায়হাতে পেয়েছি। এই রায় পর্যালোচনা করে দেখছি। মামলার রায় এবং বিষয়টি সম্পর্কেবাংলাদেশের বক্তব্য মঙ্গলবার প্রকাশ করা হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আরকিছু বলেননি তিনি।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহাম্মদ বেলালবাংলাদেশের পক্ষে ও ভারতের পক্ষে সেদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রাজেশ নন্দনপ্রসাদ রায়ের কপি গ্রহণ করেন। রায়ের কপি ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার কাছে পৌঁছেছে। তবে রায়ের ফলাফল বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। গতকালরায়ের কপি ই-মেইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছুলে এই মামলায় বাংলাদেশেরডেপুটি এজেন্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম তা পর্যালোচনা শুরু করেন। আজ এ বিষয়ে সরকারেরপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে।এই রায়ের ফলে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধনিষ্পত্তির দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে। ইতঃপূর্বে ২০১২ সালে জার্মানিরহামবুর্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারেরসঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের রায় দেয়। ফলে ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিররায়ের পর সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো দেশের সঙ্গেই আর বাংলাদেশের বিরোধ থাকবে না।

বাংলাদেশসমুদ্রসীমা নির্ধারণে ন্যায্যতাকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করার দাবিজানিয়েছে। যদিও ভারত বলেছে, সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতেহবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে জার্মানিরহামবুর্গে অবস্থিত সালিশ আদালত ইটলসে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে মামলা পরিচালিতহয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন নামেরআদালতে।
বাংলাদেশের মোট সমুদ্রসীমার পরিমাণ এক লাখ ১১ হাজারবর্গকিলোমিটারের বেশি। তার মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে রায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিহওয়ায় সেখান থেকে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পেয়েছে। বাংলাদেশের নিজস্বসমুদ্র অঞ্চল আছে প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এখন ভারতের সঙ্গেবিরোধপূর্ণ অঞ্চল আছে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। এখন ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমাচূড়ান্ত রায় পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের মোট সমুদ্র অঞ্চলের পরিমাণসুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে।

এবার রায়কে নিয়ে বড় কোনো শোরগোল করবে নাসরকার। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর বাংলাদেশের সরকারের পক্ষথেকে এটাকে বাংলাদেশের বিপুল বিজয় হিসাবে দাবি করা হয়। এখন সরকারেরদায়িত্বশীল মহলের তরফে বলা হচ্ছে, ওই দাবি ছিল অপরিণামদর্শী। কেননাআন্তর্জাতিক আদালতে এই ধরনের মামলায় কোনো একপক্ষ জয়ী হয় না। বরং বিরোধনিষ্পত্তি হয়। এই মামলায় কোনো আপিলের সুযোগ নেই। ভারতের সঙ্গে মামলার রায়েরপর তা মেনে নিয়ে তাই সরকার সংযত ও সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে মনেহচ্ছে। রায় নিয়ে তৃতীয় কোনো মহল যাতে সুযোগ নিতে না পারে সে জন্য কোনোপ্রকার বিজয় উদযাপন কিংবা হতাশা ব্যক্ত করা হবে না।

হেগের আদালতে রায়েরশুনানি গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর শেষ হয়। রুলস অব প্রসিডিউর অনুযায়ী, এই মামলারকার্যক্রম শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে হেগের সালিশ আদালত মামলাটির রায় দেয়ারকথা। সেই মোতাবেক, জুনের ১৮ তারিখের মধ্যে রায় হওয়ার কথা ছিলো। এ ক্ষেত্রেকিছুটা বিলম্বে গতকাল রায় দেয়া হয়েছে।
রায়ে হেগের আদালত ভারতের সঙ্গেসমুদ্রসীমা নির্ধারণী কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ করে দুই দেশের জলসীমা শুরুর স্থাননির্ধারণ, রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র অঞ্চল চিহ্নিতকরণ, একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলএবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ও তার বাইরে মহীসোপানের বিষয়ে রায়ে উল্লেখরয়েছে বলে জানা গেছে।