সন্দেহভাজনদের তালিকা দিয়েছে এনআইএ

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামের তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি দল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এনআইএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বর্ধমানের ঘটনায় এনআইএ প্রতিনিধি দল কিছু নাম দিয়েছে। সেখানে কতোজনের নাম রয়েছে তা না জানালেও তিনি বলেন, অল্প কিছু, অল্প কয়েক জনের নাম। এসব জঙ্গি কোন সংগঠনের সাথে জড়িত, তারা বাংলাদেশি কি না- এসব বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি মনিরুলের কাছে। তিনি বলেন, এক জঙ্গির শত নাম থাকে। এ নামগুলো আমরা যাচাই বাছাই করছি। আসলে তারা কোন দেশের নাগরিক, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এনআইএ তাদের ১০-১৫টি মোবাইলফোন নম্বর এবং কয়েকজনের নাম দিয়েছে। এরা ভারতে গিয়ে মাদরাসায় শিক্ষকতা, দোকানদারিসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে।
                বাংলাদেশের সংস্থাগুলো তাদের চেনে কি-না, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানে কি-না, সেটাই তারা জানতে চেয়েছেন। ওই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কয়েকজনের আত্মীয়-স্বজনের নাম পরিচয়ও পরীক্ষার জন্য এনআইএ কর্মকর্তারা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দল সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খানের উপস্থিতিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক পরিচিতি সভায় অংশ নেন তারা।
                পরিচিতি সভার পর মন্ত্রণালয়েই বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন এনআইএর কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের ছয় সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। দুই দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু চাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “আমরা ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাইসহ বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে তাদের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছি।
                গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে  প্রিজন ভ্যানে ওই হামলার পর থেকে পলাতক জেএমবি জঙ্গি মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান (৩৫) বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে সে দেশের গোয়েন্দাদের ধারণা। মিজান পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির তরুণ জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলেও এনআইএ কর্মকর্তাদের সন্দেহ। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর এনআইএ তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপরই ওই ঘটনায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা বলেন এ সংস্থার কর্মকর্তারা।
সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়ে এনআইএর গোয়েন্দারা দাবি করেন, বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার একটি ছকও কষছে জঙ্গিরা। এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং তাদের এই সফর চূড়ান্ত করা হয়।
এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের সঙ্গে এই প্রতিনিধি দলে আছেন সংস্থার উপমহাপরিদর্শক সজীব ফরিদ, আইজি (তদন্ত) সঞ্জীব কুমার সিং ও ডিআইজি (তদন্ত) অনুরাগ তানখা।  তাদের সঙ্গে ভারতীয় হাই কমিশনের দুই কর্মকর্তাও পরিচিতি সভায় অংশ নেন। পরিচিতি সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশ- দুই দেশেই দুষ্কৃতীরা রয়েছে। এদের খুঁজে বের করা দরকার। “তাদের এই আবেদন উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলে আমরা মনে করি।” ভারত ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড ‘দুষ্কৃতীদের’ ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়ে দুই দেশই একমত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ, যার মধ্যে শেখ রহতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে তাদের দাবি। গত ৮ নভেম্বর সাজিদকে কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জেএমবির কমান্ডার। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়। সাজিদ নামে কাউকে সনাক্ত করা না গেলেও মাসুম নামে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের র‌্যাব। ধারণা করা হচ্ছে, এই মাসুমই ভারতে গ্রেপ্তার সাজিদ। মাসুমের এক ভাইকে গত ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।