সংসদ সদস্যদের জন্য টিআর-কাবিখার আখেরি বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের শেষ সময়ে সংসদ সদস্যদের নামে টিআর ও কাবিখার বরাদ্দ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে আশানুরূপ বরাদ্দ না পাওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন সরকারি ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা। কয়েকজন প্রভাবশালী সাংসদ খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নালিশ করেন। তাই এমপিদের খুশি করতে শিগগির নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তবে দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের জন্য এটাই শেষ বরাদ্দ বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, সম্প্রতি ৫০ জন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যসহ ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে ৯৬ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। একই সাথে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ খাতে (টিআর) ৬৪ জেলার ৪৮৬টি উপজেলায় ৬৭ হাজার টন এবং দেশের ৩১৪টি পৌরসভাকে ৮ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট এক লাখ ৭৮ হাজার ৯০০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জনপ্রতি প্রায় ৩৭ টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন এমপিরা। তাই নতুন করে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তারা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যদের জন্য ৩০০ টন করে মোট ৯০ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যদের ১০০ টন করে পাঁচ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বরাদ্দের খাদ্যশস্য দিয়ে ধর্মীয়, শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও উন্নয়ন করার কথা। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৩১৪টি পৌরসভাকে দেয়া আট হাজার টন চাল দিয়েও ধর্মীয়, শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও উন্নয়ন করার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে ৪৮৬টি উপজেলা বরাবরে ৬৭ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়ে একই কার্যক্রম করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের জন্য ৭ হাজার ৯০০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ টন কমিশনারদের জন্য। অবশিষ্ট ৬ হাজার ৪০০ টন ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের জন্য। কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দের একটি অংশ উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনে সীমিত আকারে সোলার প্যানেল স্থাপন করার প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে। এর আগে সরকার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬২০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। সংবিধান অনুযায়ী এ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার মেয়াদ আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগেই নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।

সূত্র মতে, এমপিদের দাবির প্রেক্ষিতে ২৫ অক্টোবরের আগে আবারো চাল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে আগে সব সরকারের আমলেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের আমলে তাই করা হবে। তবে কী পরিমাণ চাল বরাদ্দ হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী নিজে কাজ করছেন।

জানা গেছে, ত্রাণমন্ত্রীর ৬২৫ কোটি টাকার চাল বরাদ্দে খুশি হতে পারেননি এমপিরা। খোদ মহাজোটের এমপিরাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে মোবাইলফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক প্রভাবশালী এমপি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন। একই সাথে বর্তমান সময়ে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বরাদ্দ দেয়ায় এমপিরা খুশি নন। কারণ এ সময় এমপিদের জনগণের সাথে মিশে বেশি কাজ করতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচের পরিমাণও বেড়েছে। তাই স্থানীয় প্রশাসনে বরাদ্দ না দিয়ে শুধু এমপিদের বরাদ্দ দেয়া উচিত ছিলো বলে মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জণশীল গোপাল বলেন, মানুষের মন জয় করা অনেক কঠিন কাজ। যারা ভোট দিয়েছেন তাদের প্রত্যাশা কম। কিন্তু যারা ভোট দেয়নি তাদের প্রত্যাশাটাই বেশি। তারাই এমপিদের কাছে বেশি ধরনা দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের আমলে তারাই বেশি লাভবান হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি দলের অন্য এক সংসদ সদস্য বলেন, সব সরকার নির্বাচনের সময় বরাদ্দ বাড়ায়। কিন্তু বর্তমান সরকার তা না করে আগের তুলনায় বরাদ্দ কমিয়েছে। এ ছাড়া বরাদ্দের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে এমপিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমপির বাদ দিয়ে তারা টিআর ও কাজের বিনিময়ে খাদ্যের (কাবিখা) চাল বিতরণ করলে তাদের ওপর জনগণের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, এমপিদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তাই তাদের মন জোগানো এমপিদের প্রধান কাজ। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না করা হলে তাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি দ্রুত বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। একই সাথে বর্তমান সময়ের জন্য টিআর ও কাবিখা বরাদ্দে স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্ব না দেয়ার জন্য ত্রাণমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

নাটোর-৩ আসনের এমপি জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার নির্বাচনের আগে সবাইকে বরাদ্দ দিয়েছে। ডিসি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা গ্রামের মানুষের মাঝে এসব বিতরণ করবে। আগামী নির্বাচনের আগে আরো বরাদ্দ দেয়ার জন্য তিনি ত্রাণমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, টিআর ও কাবিখাতে এমপিদের জড়ানো উচিত হয়নি। কারণ একজন এমপির টিআর ও কাবিখার চাল বিতরণ করা কাজ নয়। এমপিরা হলেন আইন প্রণেতা। তারা অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু টিআর ও কারিখার মতো জায়গায় জড়িয়ে যাওয়ার কারণে এমপিদের সম্মানহানি হচ্ছে। তিনি বলেন, টিআর ও কাবিখার চাল বিতরণের ক্ষেত্রে আইন করে দেয়া উচিত। এসব বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করবে। এমপিরা দেখভাল করবে কোথাও অনিয়ম হচ্ছে কি-না। তিনি বলেন বরাদ্দে স্বচ্ছতা না থাকার কারণে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। কারণ এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান দুজনই খেতে চায়। এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এবিএম আশরাফ উদ্দিন আরো বলেন, বর্তমান সময়ে টিআর ও কাবিখার নামে এমপিদের বরাদ্দ দেয়ার কারণে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। কারণ বিরোধীদলের সংসদ সদস্য মাত্র ৩৬ জন। এখানে সরকারের দলের এমপিরাই বেশি পাবে। আর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে যেসব বিতরণ করা হবে সেগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রাধান্য থাকবে। যতো বেশি বরাদ্দ দেবে এমপিরা ততো খুশি হবেন। তারা চান সরকার যেন টিআর ও কাবিখাতে বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করে।

বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ তার আইনজীবীর এক সহকারী ট্রাইবুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মাধ্যমে বের করেছিলেন। এ কাজে ট্রাইবুনালের অন্য এক কর্মচারী তাকে সহযোগিতা করেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাইবুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নয়ন আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।