সংশোধন হচ্ছে বেতন কাঠামো : সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলোর কাছে সুপারিশ চেয়েছে সচিব কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির প্রবেশ পদে ক্যাডারদের ন্যায় ননক্যাডারদের ৮ম গ্রেডে বেতন-ভাতার সুযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছাড়াই শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও সুবিধা বহাল রেখে বেতন স্কেলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলন নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, এ উদ্দেশে ঘোষিত পে-স্কেলে সংশোধন আনা হচ্ছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। কিন্তু নতুন পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষকদের বেতন আগের তুলনায় কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বৈষম্যের অভিযোগ আনেন প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিত্সক (প্রকৃচি) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারাও। বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডার বাদে সরকারি চাকরিজীবীরা আন্দোলনে নামেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা কর্মবিরত পালন করছেন প্রকৃচি ও ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। একই ভাবে ব্যাংক কর্মকর্তারাও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেতন বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৩ সদস্যের একটি সচিব কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে সদস্য হিসেবে আছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। ইতোমধ্যে এই কমিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, প্রকৃচি ও ২৬ ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে। এতে সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলোর কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলোর সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল ছাড়াই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধা ও পদমর্যাদা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। বেতন বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে প্রকৃচি ও ২৬ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির কাছেও সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। সুপারিশ চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছেও। তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দেয়ার বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
সচিব কমিটিসূত্রে জানা গেছে, তারা বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসেনের উপায়গুলো চিহ্নিত করে দ্রুতই এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা সেলিম উল্লাহ খন্দকার জানিয়েছেন, সচিব কমিটি তাদের কাছে সুপারিশ চেয়েছে। টাইম স্কেলের বিকল্প হিসাবে পদোন্নতির বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কিভাবে পে-স্কেলের সৃষ্ট বৈষম্য দূর করা যায় তা নিয়ে বিভিন্ন অধিদফতর ও সংস্থা প্রধানরা সুপারিশ তৈরি করছেন। অচিরেই তা সচিব কমিটির কাছে জমা দেয়া হবে। ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার সিদ্দিকী বলেন, তাদের কাছেও সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুযায়ী সুপারিশ পাঠানো হবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রবেশ পদে গ্রেড এক ধাপ নিচে নামিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে আন্দোলন করছে বলে তিনি জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ওই কমিটির সাথে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করিনি। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলে দেয়া হয়েছে কীভাবে তাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ দিতে। এদিকে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গতকালও কর্মবিরতি পালন করেছেন। ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদ ও অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে এ ধর্মঘট পালন করছেন তারা। এতে ক্লাস ও মিড টার্মসহ অন্যান্য পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
৮ম জাতীয় বেতনস্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতনস্কেলের অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহালসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং ৮ম জাতীয় বেতনস্কেলে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
অন্যদিকে বেতনস্কেল ও চাকরির বৈষম্য নিরসনের দাবিতে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিত্সক এবং ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারাও গত ১১ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন। আজ এ কর্মসূচির শেষ দিন।