সংবাদ সম্মেলনে ক্রীড়া সংগঠকদের অভিযোগ : পরিবার তন্ত্রের কব্জায় মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা দু বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে এডহক কমিটি দিয়ে। ওই কমিটি গঠনের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নীতিমালা থাকলেও তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। একই পরিবারের তিনজন সদস্য বর্তমানে ক্রীড়া সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরা হচ্ছেন ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আতাউল হাকিম লাল মিয়া ও তার ভাগ্নে আনোয়ারুল হক শাহী এবং ভাই এহসানুল কবির। শাহী ও কবির এডহক কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন। এরা কমিটির নিয়মিত কার্যক্রম কিংবা সভা পরিচালনার তোয়াক্কা না করে সকাল থেকে রাত অবধি স্টেডিয়াম ও ডিসি অফিসে পাঁয়তারা করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জেলা প্রশাসকের দোহাই দিয়ে কমিটির অন্যান্যদের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের মতো করেই সমস্ত কর্মকাণ্ড করছেন। তাই ওই কমিটির কেউ অফিসে যাওয়া-আসা করেন না। কেননা লাল মিয়া ও তার ভাই এবং ভাগ্নের কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার পরিবেশ না থাকায় খেলোয়াড়, ক্লাব কর্মকর্তা সবাই ক্রীড়া সংস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন মাঠে নিয়মিত টুর্নামেন্ট হচ্ছে। কিন্তু স্টেডিয়াম মাঠ থাকে খেলোয়াড় শূন্য। অপরদিকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকলেও তারা সুযোগের অভাবে ঝরে পড়ছেন। ওই তিন ব্যক্তিসহ একজন কোচ মিলে প্রতিবারই জেলা দলের খেলোয়াড় বাছাই করেন। যোগ্যদের বাদ দিয়ে তাদের পছন্দের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠন করা হয় জেলা দল। তাদের এ স্বেচ্ছাচারিতায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। অপরদিকে সুনাম হারাচ্ছে মেহেরপুর জেলা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দল। কেননা পূর্বের সময়ে বয়সভিত্তিক দলের গৌরব রয়েছে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহউদ্দীন আহম্মেদ আবলু এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত অভিযোগগুলো উত্থাপন করেন। মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি হলে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠেয় ওই সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহসভাপতি হাজি রজমান আলী, বর্তমান এডহক কমিটির সদস্য শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু, এভন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন, সূর্য তরুণ ক্লাবের সভাপতি শাহিনুর রহমান রিটন, ইমরুল কায়েস ক্রিকেট একাডেমীর পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম মাঞ্জা, ইয়াংস্টার ক্লাবের সভাপতি শামীমুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফুয়ান উদ্দীন আহম্মেদ রুপক, সাধারণ সম্পাদক বারিকুল ইসলাম লিজন, সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খোদা রুবেলসহ ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়বৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ছাড়াও ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান এডহক কমিটির কয়েকজন সদ্যস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়মিত টুর্নামেন্ট কিংবা লীগ আয়োজন না করা, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন জেলার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠকরা। সূর্য তরুণ ক্লাবের সভাপতি শাহীনুর রহমান রিটন তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অধীনে ২০১২ সালের ১১ জুন থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত খেলা পরিচালনার যে তালিকা প্রকাশ করেছে তার বেশির ভাগ মিথ্যা। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো ওই কমিটির সদস্যরা ২০১৩ সালের ১ম বিভাগ কিক্রেট লীগের ৬টি খেলা বন্ধ করে স্টেডিয়াম মাঠে যাত্রায় নগ্ন নৃত্যে মেতেছিলেন। যা জেলার ক্রীড়াঙ্গণে কালিমা লেপে দিয়েছে। তাই প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী ও সংগঠকদের সমন্বয়ে একটি আহবায়ক কমিটির গঠন করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করেন তিনি। জেলা প্রশাসকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে উপস্থিত ক্রীড়া সংগঠকরা আরো বলেন, বারবার জেলা প্রশাসককে প্রকৃত ঘটনা অবগত করা হলেও তিনি তা কর্ণপাত করেননি। তিনিও একই পরিবারের ওই তিন সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।সংবাদ সম্মেলন শেষে শহরের প্রধান সড়কে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে মানববন্ধন করেন ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়রা।