সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় দোষীদের শাস্তি দাবি

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে কালো পতাকা নিয়ে মানবন্ধন কর্মসূচি পালনকালে এ দাবি জানানো হয়।

বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি উষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ.আ.স.ম আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাসুদ কামাল, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নিম চন্দ্র ভৌমিক, ভাস্কর চৌধুরী, নিতাই ঘোষ, ড. অসীম সরকার, অ্যাডভোকেট সুশীল রঞ্জন বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত, সারোয়ার আলী প্রমুখ।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বব হিংস্র হামলার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় শহীদ মিনার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম মালিক, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা দলের সভাপতি ওয়ালিউর রহমান মালিক টুল্লু, জেলা লোকমোর্চার সহসভাপতি রাশেদ-উল-ইসলাম জোয়ার্দার, জেলা শিক্ষক ও অভিভাবক ফোরামের সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সম্পাদক মুন্সী জাহাঙ্গীর আলম মান্নান, চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদের সম্পাদক বৈশাখী টিভির জেলা প্রতিনিধি মরিয়ম শেলী, সুপ্র চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নুঝাত পারভীন, সিডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মোমিন টিপু, জনকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নূরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড রহমান, পল্লী উন্নয়ন পাস’র নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস হোসেন, আত্মবিশ্বাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহেদ হাসান হালিম, সুরকানন সঙ্গীত একাডেমীর সম্পাদক আহসানুল কবীর, সিডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আসমা হেনা চুমকি, গভার্নেন্স কোয়ালিশনের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান মুকুল প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা উদীচী’র সম্পাদক সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ ব্রিগেড সমন্বয়কারী জহির রায়হান।

সমাবেশ শেষে চুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনারের সামেনে প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের সময় জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশাত্ববোধক ও গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। মানববন্ধন শেষে বিশাল প্রতিবাদ পদযাত্রা চুয়াডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাসান চত্বরে সমবেত হয়। কর্মসূচি শেষে আয়োজকদের পক্ষে সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলের কাছে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ১. অবিলম্বে স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন করে হামলাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ২. সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও বিপন্ন মানুষদের নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ৩. সহিংসতার শিকার সকল মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটাতে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ৫. বিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্নির্মাণ করতে হবে ৬. সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করতে হবে ৭. অবিলম্বে মৌলবাদী জঙ্গীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। সমাবেশ ও মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সহস্রাধিক প্রতিবাদী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে দেশব্যাপি সংখ্যলঘুদের ওপর হমালা ও নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল শনিবার বিকেলে ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন- পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সিংহ রায়, সহসভাপতি কিশোর কুমার কুণ্ডু, উজ্জ্বল অধিকারী, রবিন কুমার সাহা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, বিভিন্ন মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে নীল রতন সাহা, সুরেশ সাহা, কিশোর আগরওয়ালা, ষষ্টি চরণ কর্মকার, আনন্দ সরকার, শঙ্কর কুমার সাহা, প্রদ্যুত কুমার সাহা প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গতকাল আলমডাঙ্গায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদ যৌথভাবে ওই কর্মসূচির আয়োজন করে।

বিকেলে চারতলা মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর শহরে প্রতিবাদ র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে শহরের আলিফ উদ্দীন মোড়ে সমাবেশ করে। পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার অধিকারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পৌরমেয়র মীর মহিউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান হাসান কাদির গনু, থানা অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি হামিদুল ইসলাম আজম, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার অমল কুমার বিশ্বাস। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি বিশ্বজিত কুমার সাধুখাঁ, থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রশান্ত কুমার অধিকারী, আওয়ামী লীগ নেতা সমীর কুমার দে, মাসুদ রানা তুহিন, পিলু দত্ত, সম্ভূ দত্ত, কাউন্সিলর দীনেশ কুমার বিশ্বাস, পরিমল কুমার পাল, পরিমল কুমার কালু, গোপাল কুমার মজুমদার, স্বপন কুমার সাহা, নৃপেন্দ্রনাথ কর্মকার, পলাশ অধিকারী প্রমুখ।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহে কালো পতাকাসহ প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা-কর্মীরা। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের বাড়িঘর, মঠ, মন্দির উপাসনালয় ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা লুটপাট অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে শনিবার সকালে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের ঝিনাইদহ বারোয়ারি পূজামন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলকারীরা শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মিলিত হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্ট্রান ঐক্য পরিষদ নেতা নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস, অ্যাড. সুবীর সমাদ্দার, প্রফুল্ল সরকার, অ্যাড. আজিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ার সউদ, জীবন কুমার বিশ্বাস, প্রসেনজিত ঘোষ শিপন, জাহিদুজ্জামান মনা, অশোক ধর, অ্যাড. ইসমাইল হোসেন, শফিউল্লাহ বাচ্চু, লিয়াকত আলী, আসাদুর রহমান, রবিউল আলম খোকন, এসএম মিলন, হাবিবুর রহমান রিজু, রাজু আহমেদ মিজান, তপন রায়, বিবেক জোয়ার্দ্দার, চন্দন চক্রবর্তি, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ।

নেতৃবন্দ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বক্তারা বলেন, সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করা না হলে আগামীতে কোনো নির্বাচনে ভোট দেবে না তারা।