শৈলকুপা ফেনী খুলনা নাটোর নরসিংদী ও সীতাকুণ্ডে ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: শৈলকুপা, ফেনী, খুলনা, সিংড়া, নরসিংদী ও সীতাকুণ্ডের ১৫টি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফেনীর দাগনভূঞার ৭টি কেন্দ্রে গতকাল ভোরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও গতরাতে সোনাগাজীর ১টি, খুলনার ৪টি, নাটোরের সিংড়ায় ১টি, নরসিংদীতে ১টি ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ১টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজধানীর উত্তরায় ২টি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি কেন্দ্রে পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে মারা হয়।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের ললিত মোহন ভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে ওই কেন্দ্রের চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেন।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আলী প্রিন্স জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ললিত মোহন ভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শৈলকুপা থানার ওসি আশরাকুল বারী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া সাতক্ষীরায় নির্বাচন অফিস লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। রোববারের দশম জাতীয় সংসদের ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে আজ শনিবার সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রের সরঞ্জামে এবং এর পৌনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলায় একটি স্কুলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান জানান, পৌরসভার আলম শফী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বুথ তৈরির জন্য রাখা বাঁশ ও কাপড়ে এবং চেয়ারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কিছুক্ষণের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সোয়া ১০টার দিকে ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামে অন্নদাচরণ সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

সোনাগাজি মডেল থানার ওসি সুভাষ চন্দ্র পাল জানান, অগ্নিসংযোগের পর স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এতে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এই বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছিল। ঘটনার পর পুলিশ, বিজিবি ও ৱ্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এদিকে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মাধব পাশায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে কয়েক জন দুর্বৃত্তরা মাধবপাশা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দক্ষিণ পাশের একটি কক্ষে আগুন দেয়। পরে স্থানীয়রা তা নিভিয়ে ফেলে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি শাহে আলম। তবে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।

নীলফামারীতেও দুটি স্কুলে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেয়ার প্রথম ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ডোমার থানার পুলিশের এসআই শাহিনূর ইসলাম জানান, ভোটকেন্দ্রে দুর্বত্তদের আগুনে একটি কক্ষ পুড়ে গেছে। প্রায় একই সময়ে ওই উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের গোবাচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ডোমার থানার ওসি কফিল উদ্দিন জানান, রাত সোয়া ৯টায় একটি কাগজের বাক্সে কেরোসিন ভরে ছুড়ে মেরে ওই বিদ্যালয়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় এলাকাবাসী এগিয়ে এসে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেললে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অন্যদিকে দিনাজপুর সদরে দুটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারলে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন।

তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপশহরের তফিরউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলে এবং প্রায় একই সময়ে চাঁদগঞ্জ হাইস্কুলে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। দুটি প্রতিষ্ঠানেই বারান্দায় আগুন লাগায় এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় দ্রুত নিভিয়ে ফেলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা, যা জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মো. আব্দুর রব।

তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে কান্দিপাড়া মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা ও দোতলার দুটি কক্ষে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আগুন নিভে যায় বলে জানান ওসি আব্দুর রব। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফেনীর দাগনভূঞায় পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়। এর মধ্যে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি পুড়ে গেছে, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।

মধ্যরাতের পর প্রায় একই সময়ে এই নাশকতা চালানো হয় বলে দাগনভূঞা থানার ওসি মো. নিজামউদ্দিন জানান। ৱ্যাব-৭ ফেনী আঞ্চলিক ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মহিউদ্দিন জানান, রাত দেড়টার দিকে দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের গজারিয়া আদর্শ একাডেমী ও জায়লস্কর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের সুলতানা মেমোরিয়াল হাই স্কুলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও ফেনী থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে এ দুটি স্কুলের আধাপাকা ঘর, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণের জন্য রাখা নতুন বই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রাতের একই সময়ে আগুন দেয়া হয় পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এতে স্কুলটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া একই উপজেলার সেকান্দরপুর বশিরিয়া দাখিল মাদরাসা ও মাতুভূঞা ইউনিয়নের করিমুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে আগুন দেয়া হলেও স্থানীয়রা সাথে সাথে বিষয়টি টের পেয়ে এগিয়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

নির্বাচন অফিসে হাতবোমা: এদিকে সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিসে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় দুটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এনামুল হক। তিনি বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনের গেট লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিবিরকর্মীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। গত ২৬ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তাদের দাবি, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।

গত এক মাসে বিরোধীদলের অবরোধের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নাশকতা চালানো হয়েছে, হাতবোমা ফাটানো হয়েছে একাধিক নির্বাচন কমিশনারের বাসার সামনে। বিরোধী দলের বর্জনের কারণে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। রোববার বাকি ১৪৭টি আসনে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এই ১৪৭ আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৮ হাজার ২০৮টি।