শৈলকুপায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শাসক দল আওয়ামী লীগের গৃহবিবাদ এখন গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হত্যা, মারামারি লুটসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে ছটফট করছেন।

সূত্রমতে, এ উপজেলায় কম-বেশি সব গ্রামেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। নিত্যদিনের সংঘর্ষে জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি ঘরবাড়ি ছাড়া হচ্ছে শ শ মানুষ। সব শেষ গত দু দিনে নিত্যানন্দপুর ও আবায়পুরের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন। এদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। আতঙ্কে বাড়িঘরের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

গ্রাম্যসূত্রগুলো জানায়, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এ দু দিনে নিত্যানন্দপুর এবং আবায়পুরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। অধিপত্য ধরে রাখার জন্য এবং এলাকায় দাপট বজায় রাখতে স্থানীয় নেতারা দু ভাগে বিভক্ত হয়ে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বিস্ফোরণ উন্মুখ এ পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তারা।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে আবায়পুর ইউনিয়নের কুমড়িদহ ব্রিজের কাছে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইউনিয়নে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মোল্লা ও সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তার হোসেন মৃধার সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয়পক্ষ গ্রাম্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে দফায় দফায় সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের পাঁচপাখিয়া, কৃপালপুর, ফাজিলপুর গ্রামে। ফাজিলপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ও কুমড়িদহ ব্রিজের কাছে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে দু দফায় গুলি ছোড়ে।

গ্রামবাসীরা দাবি করেছে, এ সময় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কয়েক দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। বিকেলে ফের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আহত হয় আরও কয়েকজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষ চলাকালীন বাড়িঘরে হামলাও চলতে থাকে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গ্রাম্যসূত্র দাবি করেছে, দল পরিবর্তন করা নিয়ে নতুন করে এ বিবাদ শুরু হয়েছে। কুমড়িদহ গ্রামের কয়েকজন শক্তিশালী মুক্তার মৃধার পক্ষ ত্যাগ করে মিষ্টিমুখ করে প্রতিপক্ষ ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ মোল্লার দলে যোগ দেন। এ নিয়ে নতুন করে এ সংঘাত বাধে। এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলামের ইটের ভাটা থেকে যশোর থেকে ছিনতাই করা ২৬টি গরু উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। সাইফুল বিএনপি করলেও মুক্তার মৃধার সাথে সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে তার।

অন্যদিকে থানা বিএনপি নেতা একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কৌশলগত কারণে বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে গোপনে সমর্থন দিয়ে আসছেন। এতে করে এলাকায় মুক্তার মৃধার দাপটে ভাটা পড়েছে। কুমড়িদহ গ্রামের আজিবর শেখ বলেন, বিএনপির ভূমিকা এখন যৌথবাহিনীর মতো খানিকটা। তার ভাষায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় দু নেতার পক্ষেই রয়েছেন তারা। অন্য একটি সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলীর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। শৈলকুপা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান শিকদার মোশাররফ হোসেন রয়েছেন এমপির সাথে।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, সংঘাতপূর্ণ গ্রামগুলোতে কমপক্ষে দুটি গ্রুপ রয়েছে। প্রাপ্ততথ্য মতে, যারা সংঘাতে জড়িয়েছেন তাদের অনেকেই গোপনে লবিং করে থাকেন এমপির সাথে। সেই সূত্রে মুক্তার মৃধা ও চেয়ারম্যান আমজাদ মোল্লা সরকারদলীয় এমপি আবদুল হাইয়ের অনুগত। দলীয় সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতির দ্বৈত নীতির কারণে গ্রামে গ্রামে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন এ অবস্থায় এমপি সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্য একটি সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার করার সাথে যুক্ত হয়েছে মামলার অর্থ জোগানদাতাদের কাঠি নাড়া। এলাকায় প্রভাব ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে সংঘাত বাধিয়ে দেন তারা।
একই উপজেলার পিড়াগাতী গ্রামের বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম এ মাসের ৫ তারিখে স্থানীয় শেখরা বাজারে দলীয় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মাত্র কয়েকদিনের মাথায় তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।