শিশু শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে দিলেন শিক্ষক স্বপন

গাড়াবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অমানবিক নির্যাতন

 

স্টাফ রিপোর্টার: লেখা ভুল হওয়ার কারণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতন করেছেন শিক্ষক শরিফুজ্জামান স্বপন। তার নির্যাতনের শিকার দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক ছাত্রই আহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবচে গুরুতর অবস্থা হয়েছে শিশু শামীম হোসেনের। শিক্ষক স্বপনের লাঠির আঘাতে তার একটি হাত ভেঙে গেছে। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার ৫৭ নং গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র নির্যাতনের এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। আর অভিভবাকরা ফুঁসে উঠেছেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন। ইতঃপূর্বেও শিক্ষক স্বপনের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবক মহল কয়েক দফা দরবার বসায়।

গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফুজ্জামান স্বপন দ্বিতীয় শ্রেণিতে অঙ্ক বিষয়ে পাঠদান করছিলেন। এ সময় অঙ্ক ভুল করার কারণে ১০/১২ জন শিক্ষার্থীর ওপর হামলে পড়েন তিনি। বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন ওই ছাত্র-ছাত্রীদের। বেপরোয়া পেটানোর ফলে ছাত্র শামীম হোসেনের (৮) ডান হাত ভেঙে যায়। সে অচেতন হয়ে পড়ে গেলে ক্লাসে হইচই শুরু হয়ে যায়। তার সহপাঠীসহ পঞ্চম শ্রেণির কিছু ছাত্র শামীমকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। এক্স-রে করার পর দেখা যায় তার হাতটি ভেঙে গেছে। এরপর শামীমের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে হয়ে ওঠেন। এলাকার অভিভাবক মহলও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে অভিযুক্ত শিক্ষক স্বপন স্কুল থেকে কৌশলে সটকে পড়েন। পরে অভিভাকরা সংগঠিত হয়ে স্কুলে যায় কিন্তু; এ সময় শিক্ষক স্বপনকে পাওয়া যায়নি। নির্যাতিত ছাত্র শামীম হোসেন সাংবাদিকদের জানায়, ‘স্যার অঙ্ক করতে দেন। ৬ এর স্থলে ভুল করে ৩ লিখে ফেলার কারণে মেরে আমার হাত ভেঙে দিয়েছেন।’ অভিযুক্ত শিক্ষক স্বপনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শামীম পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান শফি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও শামীমের হাত ভেঙে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য। তিনি জানান, ‘স্বপনকে এর আগেও সাবধান করে দেয়া হয়েছে; কিন্তু তিনি কারোর কথা আমল দেন না।’

এ ব্যাপারে শামীমের মা লিপি খাতুনসহ অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সভাপতি গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আবু হোসেন ওরফে হাশেম মণ্ডলের কাছে অভিযোগ করেন। আজ এ বিষয়ে বৈঠক বসতে পারে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান অবৈধ ঘোষণা করেছেন উচ্চআদালত। উচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি দেয়াশিশুদের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন। শিক্ষকদের নিষ্ঠুর, অমানবিকশাস্তির ফলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে এভাবে শিক্ষকদের নির্যাতন মেনে নিতে পারছেন না গাড়াবাড়িয়া গ্রামের অভিভাবকরা। তারা এ অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন। কারোর ছত্রচায়ায় শিক্ষক স্বপন যেন পার পেয়ে না যান সেব্যাপারে অভিভাবকরা জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শিক্ষক স্বপন কর্তৃক ছাত্র নির্যাতনের ফলে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন অভিভাবক মাথাভাঙ্গাকে জানান।

এলাকার অভিভাকরা জানান, গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি এক বছরেরও বেশি সময় শূন্য হয়ে আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান শফি পান খাওয়ায় অভ্যস্ত। এ কারণে তিনি প্রায় প্রতিদিনই পান আনার জন্য ছাত্রদের দোকানে পাঠান। এ ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঠে পাঠান শাক তুলে আনার জন্য। এ কারণে বিদ্যালয়টিতে লেখাপাড়ার মান নিম্নগামী হয়ে উঠছে দিনদিন। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন ও খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তারা আশা করে।